দেশেজুড়ে ‘ক্র্যাকডাউন’ চলছে, দাবি বিএনপির

টুইট ডেস্ক : সরকার পতন আন্দোলনে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ও সংঘাতের পর থেকে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও মামলায় জর্জরিত এখন বিএনপি। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করছে পুলিশ।

এমন প্রেক্ষাপটে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাজ করছে। ঢাকায় পুলিশ হত্যা ও নাশকতা মামলা এবং পরবর্তীকালে অবরোধ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে মামলা হওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।

বিএনপি এই অভিযানকে বলছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘পরিকল্পিত একটি ক্র্যাকডাউন’ চলছে।

ঢাকাসহ সারাদেশে মামলা এবং পুলিশের অভিযানে দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি ।

এ অবস্থায় পুলিশ বলছে, ২৮ অক্টোবর পুলিশ হত্যা ও সহিংসতা এবং অবরোধে সহিংসতার কারণে অভিযান চলছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বা ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ১১৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এজাহারভুক্ত আসামীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক হাজার প্রায় ৭০০ জন।

অন্যদিকে বিএনপির দাবি ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় ৬০০ মামলা হয়েছে। বিএনপির দাবি, এসব মামলায় আসামীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার এবং ১২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তবে এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তর কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘‘গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে এসব মামলা দিয়ে সরকার একটি ‘ক্র্যাকডাউন’ চালাচ্ছে। এই পুরো প্রক্রিয়াটা মনে হচ্ছে একটা স্টেইট স্পন্সরড প্রিপ্ল্যানড ক্র্যাকডাউন ( রাষ্ট্রীয় মদদে পূর্ব পরিকল্পিত)। বিএনপি করে এমন লোকজন তো আছেই, তাদের আত্মীয়-স্বজনও নাজেহালের শিকার হচ্ছে,” বলেন কায়সার কামাল।

ঢাকা ও ঢাকার বাইরে মামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এসব মামলা বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা হচ্ছে। মামলার এজাহারে বিএনপির অধিকাংশ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে আসামী করা হচ্ছে।

কায়সার কামাল বলছেন, ‘‘যেভাবে মামলা দেয়া হচ্ছে এবং আসামী করা হচ্ছে, সেটি উদ্বেগজনক। বিশেষ আইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জামিন দিতে না পারেন। তার মানে হলো, যখন একজন অ্যারেস্ট হলো জামিন পাচ্ছে না। কারণ আইনেই বলা আছে যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের কোনো এখতিয়ার নেই জামিন দেয়ার।

“অর্থাৎ তার কারাবাস দীর্ঘায়িত হচ্ছে। পরবর্তীতে কেউ যদি গিয়ে হাজিরও হয় স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে তাকেও জেলে যেতে হচ্ছে,” বলেন কায়সার কামাল।

২৮ অক্টোবর পরবর্তী ধরপাকড়ের শুরুতেই আটক হন বিএনপির মহাসচিব। এরপর একে একে দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু ঢাকা মহানগরীতেই গত ১০ দিনে ১১৭টি মামলায় দেড় হাজার বিএনপি নেতা-কর্মী আটক করা হয়েছে বলে তথ্য দিচ্ছে পুলিশ।

ডিএমপির মুখপাত্র মো: ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ হত্যা ও সহিংসতার মামলায় সারাদেশ থেকে ঢাকায় এসে যারা জড়িত ছিল সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এটা তো একটা ব্যাপক অভিযান চলছে বলাই যায়। সারা দেশ থেকে ঢাকায় তাদের লোক সমাগম হয়েছিল। ঢাকা মহানগরে যে ৪০টির মতো মামলা রেকর্ড হয়েছে, এসব মামলার আসামী কিন্তু সারাদেশে বিস্তৃত।

ফলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশনা বা আমাদের নির্দশনায় যেসব আসামীর বাড়ী যেসব এলাকায় আছে, জেলা শহরে আছে বা কোনো গ্রামগঞ্জে আছে – তাদেরকেও কিন্তু ওই জেলার পুলিশ গ্রেপ্তার করবে এবং এই মামলায় আমাদের কাছে চালান দেবে, বলেন ডিএমপি মুখপাত্র।

২৮ অক্টোবরের পর অনেকটা ঘোষণা দিয়েই সরকার এখন বিএনপির বিরুদ্ধে কঠোর হয়েছে। বিএনপিও হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচী দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সব মিলিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ পরিস্থিতি জনমনে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। খবর- বিবিসি বাংলা