ফেসবুকে সোহেল তাজের আবেগঘন স্মৃতিচারণ
টুইট ডেস্ক: ফেসবুকে সোহেল তাজের আবেগঘন সুতি চারণ-যা বাংলা হবহু লিখার চেষ্টা করা হলো। শব্দ, ভাষা, ভুল পঠনযোগ্য করে পড়ার অনুরোধ।
আমি প্রতিমন্ত্রী (৩১/৫/২০০৯) এবং পরবর্তীতে সংসদ সদস্য (২৩/৪/২০১২) পদ থেকে পদত্যাগ করার পর এই আর্টিকেলটা লেখা হয়েছিল- শেয়ার করলাম
এক গৌরবময় বিদায়
সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সোহেল তাজ। তবুও নতুন ধারার রাজনীতির স্বপ্ন দেখানো মানুষের কাছে তিনি এক নায়ক হয়ে থাকবেন।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নির্বাচনী ইশতেহার ‘পরিবর্তনের অঙ্গীকার’ প্রকাশ করেন। সেখানে একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহনশীলতা আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
এ প্রতিশ্রুতি বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় লাভ করে। সংসদে ১৬৩ জন প্রথমবার নির্বাচিত হন, যাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ।
তরুণদের প্রতিনিধি হিসেবে সোহেল তাজ মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে স্থান পান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। মাত্র পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠেনি। বরং তার সততা পুলিশ বাহিনীর মনোবল বাড়িয়েছিল। তিনি বাহিনীর ভাবমূর্তি পরিবর্তনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। অনেক পুলিশ সদস্য আজও তার সততা ও আন্তরিকতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
কেন তিনি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদ ছেড়েছিলেন? কারণ, তাকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। শেখ হাসিনার “কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীর” অযাচিত হস্তক্ষেপে তিনি বিরক্ত হন। আপস না করে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তবে এতেও তিনি স্বস্তি পাননি। পরবর্তীতে জানতে পারেন, তার পদত্যাগ গৃহীত হয়নি; বরং তাকে জোরপূর্বক ‘পদবিহীন প্রতিমন্ত্রী’ হিসেবে রাখা হয়েছে। এমনকি ২০০৯ সালের মে মাসে পদত্যাগের পরও তার ব্যাংক হিসাবে প্রতিমন্ত্রীর বেতন জমা দেওয়া হচ্ছিল।
এ তথ্য জানতে পেরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হন সোহেল তাজ। বর্তমানে তিনি বিদেশে রয়েছেন এবং সরকারকে তার হিসাবে জমা হওয়া প্রায় ৪০ লাখ টাকা ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে, প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে তার পদত্যাগের গেজেট প্রকাশের দাবিও জানিয়েছেন। তার মতে, এটি শুধু তার সম্মান নয়, সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টার-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি জানতে চাই, গেজেট প্রকাশ না করে এই বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করা হলো কেন? আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগের পর কোনো ভাতা পাইনি, অথচ দুই বছর পর হঠাৎ করে প্রতিমন্ত্রীর বেতন আমার হিসাবে জমা দেওয়া হলো! আমি এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চাই।”
এ বিষয়ে তিনি ১৬ ও ১৭ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে দুটি চিঠি পাঠান। এরপর ১৯ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ব্যাখ্যায় বলেন, মন্ত্রীর পদত্যাগ তখনই কার্যকর হয় যখন প্রধানমন্ত্রী তা গ্রহণ করেন এবং রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করেন।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “আমরা রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পদত্যাগ গ্রহণ করিনি, তাই তাকে পদবিহীন মন্ত্রী করা হয়েছে।”
তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, মন্ত্রীর পদত্যাগ কার্যকর হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। সংসদীয় গণতন্ত্রে এটি অব্যাহত থাকা মেনে নেওয়া যায় না। একজন মন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিলেই তা কার্যকর হয়ে যায়।
সোহেল তাজ তার পরিবারের সম্মান এবং তার পিতা, বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে দেননি। তাই তিনি ২৩ এপ্রিল সংসদ সদস্য পদ থেকেও পদত্যাগ করেন। এতে সরকার তাকে আর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ধরে রাখতে পারেনি। সংবিধান অনুসারে, এখন শেখ হাসিনা যদি তাকে পুনরায় মন্ত্রী করতে চান, তবে রাষ্ট্রপতিকে নতুন করে নিয়োগ দিতে হবে এবং তাকে শপথ নিতে হবে।
সোহেল তাজের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনে রাখা উচিত ছিল, তিনি অন্যদের মতো নন। তিনি এমন একজন ব্যক্তির সন্তান, যিনি সততার প্রতীক। তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালে নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারকে দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার পর কোনো লোভ করেননি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছিলেন, যদিও বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে অন্যায়ভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সোহেল তাজের পদত্যাগ আওয়ামী লীগের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি ধাক্কা। এটি তরুণদের রাজনীতিতে প্রবেশের আগ্রহ কমিয়ে দিতে পারে। আওয়ামী লীগ নেতারা হয়তো তার পদত্যাগকে গুরুত্ব দিতে চান না, তবে দলের অনেক সংসদ সদস্য এতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “আমি গভীরভাবে দুঃখিত। একজন সংসদীয় সহকর্মী ও আদর্শ জন প্রতিনিধি হারানো আমাদের সবার জন্য বিশাল ক্ষতি।”
তার মতো অনেকেই সোহেল তাজের বিদায়ে দুঃখ পেয়েছেন, আবার অনেকে গর্বিতও হয়েছেন। প্রতীকী অর্থে, তিনি এখনও তাজ-যারা নতুন ধারার রাজনীতির স্বপ্ন দেখে, তাদের জন্য এক উজ্জ্বল মুকুট।
সূত্র: শাখাওয়াত লিটন, দ্য ডেইলি স্টার, ২৭ এপ্রিল ২০১২