অ্যামেরিকার হামলায় ইরানের পাশে রাশিয়া, ভারত, স্পেন: কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাতের ঘনঘটা। ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় অ্যামেরিকার বিমান হামলার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
রাশিয়া, ভারত এবং স্পেনসহ একাধিক দেশ এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কঠোর সমালোচনা করেছে এবং কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে।
হামলা ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
শনিবার (২১ জুন) গভীর রাতে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় অ্যামেরিকা। হামলার মূল কারণ এখনো স্পষ্ট নয়, তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান-ইসরায়েল চলমান উত্তেজনার পটভূমিতে এটি একটি সরাসরি হস্তক্ষেপ।
এই হামলার পরপরই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, এটি একটি দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং আন্তর্জাতিক আইনের ‘সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’। বিবৃতিতে বলা হয়, “সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমা হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। জাতিসংঘ সনদ ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব এই ধরনের আগ্রাসন নিষিদ্ধ করে।”
রাশিয়া কেবল নিন্দা জানিয়েই থেমে থাকেনি, তারা এই ‘আগ্রাসন’ অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং কূটনৈতিক পথে উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ জোরদার করার তাগিদ দিয়েছে।
মোদির টেলিফোন বার্তা ও ভারতের অবস্থান
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক টুইটার বার্তায় জানান, তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে অবিলম্বে উত্তেজনা কমানো ও কূটনৈতিক সংলাপ শুরু করা জরুরি।” মোদি আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃস্থাপনে ভারতের সক্রিয় ভূমিকা অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন।
স্পেনের উদ্বেগ ও কূটনৈতিক আহ্বান
স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে ম্যানুয়েল আলবারেস বুয়েনো এক বিবৃতিতে বলেন, “ইরান-আমেরিকার সামরিক সংঘর্ষ গোটা অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক। আমরা গভীর উদ্বিগ্ন। সামরিক সমাধান নয়, বরং আলোচনার মাধ্যমেই শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব।” তিনি সব পক্ষকে দ্রুত আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানান।
রাশিয়া-ইরান ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ছে
এই হামলার প্রেক্ষাপটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য আগামী সোমবার মস্কো সফরের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান-রাশিয়া সম্পর্ক এখন কৌশলগত নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ-পরিস্থিতির ছায়া ক্রমেই ঘন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের হামলা শুধুমাত্র ইরান নয়, বরং গোটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক কূটনৈতিক বিভাজন তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়, এই উত্তেজনা আরও বাড়ে নাকি বড় শক্তিগুলোর হস্তক্ষেপে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হয়।
