ডেঙ্গুতে মৃত্যুহারে শীর্ষে বাংলাদেশ

টুইট ডেস্ক: দিনে দিনে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছে। মৌসুমি রোগ থেকে ডেঙ্গু হয়ে উঠেছে সারা বছরের রোগ। তবে এক দশক ধরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মশকনিধন ও রোগী ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণগুলোকে দায়ী করেছেন।

রোগতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের রোগ ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বাংলাদেশেই বেশি। শতাধিক দেশে এই রোগের বিস্তার থাকলেও সেসব দেশে মৃত্যুহার তুলনামূলক কম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বছরভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশে ২০০০ সাল সাড়ে ৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, মৃত্যু হয় ৯৩ জনের। মৃত্যুহার ছিল শতকরা ১ দশমিক ৬৭ জন। এরপর ২০০৬ সাল পর্যন্ত কোনো বছর মৃত্যুহার ছিল ২ শতাংশ, কোনো বছর তা শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে কোনো মৃত্যু ঘটেনি। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মৃত্যুহার ছিল ১ শতাংশের কম। ২০১৪ সালেও কোনো মৃত্যু হয়নি। কিন্তু এর পর থেকেই দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। মাঝে কেবল ২০১৯ সালে মৃত্যুহার কমেছিল।

দেশে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২০২২ সালে, ৩ লাখ ২১ হাজার জন। ওই বছর মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০০ রোগীর। মৃত্যুহার ছিল শূন্য দশমিক ৫৩ শতাংশ। আর চলতি বছর ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ৫৪ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, মারা গেছে ২৬৮ জন।

বৈশ্বিকভাবে ডেঙ্গুতে বাংলাদেশে মৃত্যুহার শীর্ষে বলে জানিয়েছে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল (ইসিডিসি)। তাদের মতে, চলতি বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেড় কোটি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট মৃত্যু ৬ হাজার। এই দেড় কোটি রোগীর বেশির ভাগই দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের বাসিন্দা। এর মধ্যে ১ কোটিই ব্রাজিলের রোগী। ১০ লাখ রোগী দক্ষিণ আমেরিকার অন্যান্য দেশের। দক্ষিণ আমেরিকার এসব দেশে রোগীর বিপরীতে মৃত্যুহার শতকরা শূন্য দশমিক শূন্য ৫৭ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশে এই হার শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ।

রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও সংস্থাটির পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, যে সংখ্যক রোগীর তথ্য আমরা সরকারের পক্ষ থেকে পাচ্ছি, প্রকৃত রোগী তার কয়েক গুণ বেশি। যারা হাসপাতাল ভর্তি হচ্ছে তাদের সংখ্যাই আমরা জানি। এর বাইরে বহু রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছে, মারা যাচ্ছে, সেই সংখ্যা আমাদের জানা নেই। তা ছাড়া, শনাক্ত হয়নি কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত—এমন রোগীর সংখ্যাও কম নয়। আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি, মশা নির্মূল ও রোগী ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে না। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়নি। এটাও একটি বড় সমস্যা।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) শেখ দাউদ আদনান দাবি করেছেন, সারাদেশে একই চিকিৎসা প্রটোকল (চিকিৎসা নির্দেশিকা) মেনে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তিনি বলেন, আমরা চিকিৎসা প্রটোকল রিভাইস করছি। হাসপাতালে রোগী ব্যবস্থাপনায় কোনো ঘাটতি নেই।