মালয়েশিয়ায় দুর্বৃত্তদের হাতে প্রাণ হারালেন বড়াইগ্রামের কবির

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম : কবির হোসেন সংসারের সচ্ছলতা ফেরাতে ৭ বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান । সেখানে ক্যাসেল নামে এক কোম্পানিতে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ দুই বছর আগে ছুটিতে বাড়ি আসেন । ছুটি কাটিয়ে পুনরায় মালয়েশিয়ায় কাজে ফিরে যান। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে স্ত্রী-সন্তানের কাছে আগামী ১ জানুয়ারিতে ফিরবেন বলে জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু সে ফেরা তার আর হলো না। মালয়েশিয়ার চামান্ডা উতিরাম এলাকার দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন নাটোরের বড়াইগ্রামের প্রবাসী কবির হোসেন।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে পরিবারের কাছে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছালে পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় এলাকার আত্মীয়-স্বজন খবর পেয়ে নিহতের বাড়িতে ছুটে আসেন। তাদের আহাজারি আর কান্নায় স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো এলাকা। কবির হোসেন নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কয়রাগ্রামের বাসিন্দা। পরিবারে স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে তার।

পরিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে কাজের জন্য মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেন কবির। এরপর মালয়েশিয়ায় একটি কারখানায় নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ শুরু করেন। সর্বশেষ ২ বছর আগে তিন মাসের ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন। সামনে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে পুনরায় দেশে ফেরার কথা ছিল তার। মালয়েশিয়ার ক্যাসেল কারখানার দ্বিতীয় গেটে দায়িত্ব পালন করতেন। রাত ৯টার দিকে বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। এরপর রাতে কারখানায় দায়িত্বরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত প্রাণ হারান। রাত ৩টার দিকে পরিবারের কাছে মৃত্যুর সংবাদ পৌঁছায়।

নিহত কবিরের একমাত্র ছেলে সোহান হোসেন বলেন, আমার বাবার সামনের মাসে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। অনেক আশায় ছিলাম আমরা। বাবা বাড়িতে আসবে। কিন্তু সেই আনন্দ শেষ হয়ে গেল। গতরাতে ডিউটিরত অবস্থায় আমার বাবাকে কে বা কারা খুন করেছেন। কেন আমার বাবাকে খুন করা হলো, আমি তার বিচার চাই। আমার বাবার লাশ যেন দ্রুত আমাদের কাছে পাঠানো হয় সরকারের কাছে আমাদের সেটাই চাওয়া।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্ত্রী শিউলি বেগম বলেন, আমার স্বামীর কত স্বপ্ন ছিল সে দেশে ফিরবে। সেজন্য সব রকম প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাত ৯টায় আমাকে ফোন করেন, আমার বুকে ব্যথায় কথা বলতে পারিনি। ব্যথা কমলে ফোন দিতে বলেছিল আমার স্বামী। পরে কল দিলে আর পাইনি। আমার স্বামীকে কে মারল, এমন শক্র কে? তার বিচার চাই।

বড়াইগ্রামের ইউএনও লায়লা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি একই সাথে আমরা শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করিছি । পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছি। যেকোনো প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন তার পরিবারের পাশে থাকবে।