ভোট সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভোটারদের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও টানা তিনবারের এমপি এনামুল হকের নেতাকর্মীদের উপর হামলা, নির্যাতন, ভয়ভীতি দেখানো এবং পোস্টার ব্যানার লিফলেট ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী অফিস ভাংচুরের প্রতিবাদে ও অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে কাঁচি প্রতীকের সমর্থকরা।

শনিবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেঁউখালী বাজারে তাহেরপুর-আত্রাই সড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ করে। এ সময় তাদের অনেকেই রাস্তার উপর বসে ও শুয়ে পড়েন। এতে ওই রাস্তায় যান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। খবর পেয়ে পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের উপর হামলার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনে। পরে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা রাস্তা ছেড়ে চেঁউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভা করেন। পথ সভায় স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক এমপির কর্মী আব্দুস সালাম বলেন, নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরুর পর থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর স্বশস্ত্র ক্যাডাররা আমাদের উপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ‍শুক্রবার দুপুরে কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী এনামুল হক এমপির ব্যক্তিগত সহকারীসহ ৪ জন কর্মী-সমর্থককে তারা পিটিয়ে জখম করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এ হামলায় নেতৃত্ব দেন শয়ন গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর সরকার।

আব্দুস সালাম আরও বলেন, কয়েকদিন আগে আলমগীর তালতলি মোড়ে নৌকার পথসভায় প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয় গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে কাঁচি প্রতীকে কোন পোস্টার লাগাতে দেওয়া হবে না। যে লাগাবে তাকে শুধু মার হবে। এর পর থেকে এই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন পোস্টার ব্যানার লাগাতে দেওয়া হয়নি। দু-এক স্থানে লাগানো হলেও ছিঁড়ে ফেলা হয়।

এছাড়াও অফিস ভাংচুর করে নৌকা প্রার্থীর লোকজন। এর অংশ হিসেবে শুক্রবার স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক এমপির ব্যাক্তিগত সহকারির পিএসকেসহ চারজনকে পিটিয়ে জখম করে। নৌকার প্রার্থী যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে তাতে যে ভোটাররা ভয় পেয়ে কেন্দ্রে না যায়। নির্বাচনের মাঠে এভাবে সন্ত্রাস চললে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। কিন্তু গোয়ালকান্দির সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে চায়। এর পরিবেশ প্রশাসনকে করতে হবে।

এদিকে, একই দাবিতে উপজেলার শিকদারী বাজারে বিক্ষোভ করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। এ বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েকশো নারী-পুরুষ। তারা বাগমারায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি ও নির্বাচনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবি জানিয়ে নানা শ্লোগান দেয়।

বিক্ষোভে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল মালেক মন্ডল, সহ-সভাপতি মতিউর রহমান টুকু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ, দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ আক্তার বেবি, গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ লিটন প্রমুখ।

এছাড়াও দুপুরে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এমপি। সংবাদ সম্মেলন তিনি দাবি করেন শতভাগ পরাজয় হবে বুঝতে পেরে নৌকার প্রার্থী নানাভাবে এলাকায় জুলুম শুরু করে দিয়েছে।

তিনি প্রশাসনের কাছে এসব বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ভোটের মাঠ ‘লেভেল প্লেইং ফিল্ড’ তৈরি করার দাবি জানিয়েছে এনামুল হক বলেন, তিনি গত ১৫ বছর ধরে এমপি। গত ১৫ বছরে কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা ঘটেনি। একজন মায়ের বুক খালি হয় নি। গত ১৫ বছর ধরে এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করছেন। কিন্ত ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকে বাগমারায় আগের সেই সন্ত্রাস ফিরিয়ে এনেছে নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেয়েই নৌকার প্রার্থীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বাগমারার মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছেন। তিনি এমপি হলে কি হতে পারে তার প্রমান গত কয়েক দিনে দিয়ে দিয়েছে।

বিক্ষোভের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জল হোসেন ও বাগমারা থানার ওসি অরিবিন্দ সরকার উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেন।

বাগমারা থানার ওসি অরিবিন্দ সরকার বলেন, আমরা অবাধ সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যেগুলো ঘটনা ঘটেছে সেগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচনের মাঠে সন্ত্রাস করে কেউ ঠায় পাবে না।

সহকারি রিটানিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ‍উজ্জল হোসেন বলেন, আপনারা অভিযোগ দিলে অবশ্যই সে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সাথে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশ্বাস দেন তিন।