সাবেক এমপি হেনরীর ৬৮ ব্যাংক হিসাব ও ২০ কোটি টাকা জব্দ

টুইট ডেস্ক: সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত আরও জোরদার হয়েছে।

হেনরীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ভিত্তিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তার ৬৮টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের (অবরুদ্ধ) আদেশ দিয়েছেন।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই আদেশ দেন। এসব ব্যাংক হিসাবে মোট ২০ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ৭০২ টাকা জমা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসিফ আল মাহমুদ আদালতে সাবেক এমপির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত দুদকের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং তার সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।

এর আগে, ২০২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শামীম তালুকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি, দুদক আদালতে আবেদনের মাধ্যমে জান্নাত আরা হেনরীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে।গত ৬ জানুয়ারি, আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি আদেশ জারি করেন এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এছাড়াও, দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর আদালত জান্নাত আরা হেনরী, তার স্বামী শামীম তালুকদার ও মেয়ে মুনতাহা রিদায়ী লামের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

২০২৪ সালের ১২ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয় আদালত।

📌 ৫০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ
📌 ১৬টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ
📌 ১৯টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা
📌 চারটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা

দুদক সূত্রে জানা গেছে, জান্নাত আরা হেনরী ও তার স্বামী শামীম তালুকদার অবৈধ উপায়ে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন।

সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ, অন্যান্য ব্যবসা ও বিনিয়োগের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার, রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, তারা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করেছেন, যার বৈধ কোনো উৎস নেই।

অন্যদিকে নিক্সন চৌধুরী ও স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এদিন আদালত ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী ও তার স্ত্রীকেও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে এবং তদন্ত চলছে।

দুদক জানায়, জান্নাত আরা হেনরী ও তার পরিবারের অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচার নিয়ে তদন্ত আরও গভীর করা হবে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, তার ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করা, সম্পদের বৈধতা যাচাই করা এবং অবৈধ লেনদেনের তথ্য বের করা হবে ।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদি তদন্তে আরও অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ ক্রমশ গুরুতর হয়ে উঠছে। তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ, ব্যাংক হিসাব ও বিলাসবহুল জীবনযাত্রা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। আদালতের সাম্প্রতিক আদেশের মাধ্যমে তার অবৈধ সম্পদ আটকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দেখার বিষয়, দুদকের তদন্তে আরও কী নতুন তথ্য বেরিয়ে আসে এবং তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হয়।