ভারতের নৌবাহিনীর জন্য ফ্রান্সে ২৬টি রাফালে-এম যুদ্ধবিমান চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সরকার ফ্রান্সের কাছ থেকে নৌবাহিনীর জন্য ২৬টি রাফালে-এম যুদ্ধবিমান কেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির মোট মূল্য প্রায় ৬৩ হাজার কোটি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকার সমান।

এই চুক্তির আওতায় ভারত নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ২২টি একক আসনের রাফালে-এম যুদ্ধবিমান এবং ৪টি প্রশিক্ষণ বিমান কিনবে।

এ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ২০৩১ সালের মধ্যে এসব যুদ্ধবিমান ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে এসে পৌঁছাবে। চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, লজিস্টিক সহায়তা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। ভারতের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কিছু যন্ত্রাংশ দেশীয়ভাবে তৈরি করা হবে।

রাফালে-এম যুদ্ধবিমানগুলো বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম উন্নত নৌযুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচিত। এটি ফ্রান্সের নৌবাহিনীই একমাত্র ব্যবহার করে। বিমানটি শক্তিশালী ল্যান্ডিং গিয়ার, ভাঁজ করা ডানা এবং বৈরী আবহাওয়ায় বিমানবাহী রণতরীতে নামার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা সহকারে তৈরি।

ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য এই যুদ্ধবিমানগুলো বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্যতে মোতায়েন করা হবে, যার ফলে ভারত মহাসাগরে ভারতের নৌ-সামরিক শক্তি আরও শক্তিশালী হবে। পুরোনো মিগ-২৯কে বিমানগুলোকে ধীরে ধীরে প্রতিস্থাপন করা হবে রাফালে-এম যুদ্ধবিমান দিয়ে।

ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ ত্রিপাঠি বলেন, ‘‘ভারত এমন কৌশলগত প্রস্তুতি নিচ্ছে যাতে অপারেশনাল এলাকায় কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া যায় এবং সব ধরনের প্রতিবেশী হুমকির জবাব দিতে দেশ প্রস্তুত থাকে।’’

ভারতের বিমানবাহিনীর কাছে বর্তমানে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান রয়েছে, যা মূলত দুটি উত্তরাঞ্চলীয় ঘাঁটি থেকে পরিচালিত হয়। নৌবাহিনীর জন্য রাফালে-এম সংগ্রহের ফলে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও বাড়বে। বিশেষভাবে, ‘বাডি-বাডি’ রিফুয়েলিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি বিমান মাঝ আকাশে অন্য বিমানকে জ্বালানি সরবরাহ করতে পারবে, যা যুদ্ধবিমানগুলোর মিশনকালকে দীর্ঘায়িত করবে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে দেশীয়ভাবে তৈরি পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমানও যুক্ত করা হবে, যা বিমানবাহিনীর জন্য তৈরি অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএমসিএ) এর নৌ সংস্করণ হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতের এই সামরিক বিনিয়োগ শুধু শক্তি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রাফালে যুদ্ধবিমান ফ্রান্সের ড্যাসো এভিয়েশন দ্বারা নির্মিত একটি মাল্টিরোল ফাইটার জেট, যা উচ্চমাত্রার কৌশলগত সক্ষমতা এবং দীর্ঘ পরিসরের জন্য পরিচিত। এটি একাধিক যুদ্ধ মিশনে অংশ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সেনাবাহিনীর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই বিমানের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, সুদৃঢ় নির্ভরযোগ্যতা, এবং কার্যকরী অভিযানের জন্য অসাধারণ সক্ষমতা।

রাফালে যুদ্ধবিমানটি ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত আফগানিস্তানে বহু যুদ্ধ মিশনে অংশ নিয়েছে, যেখানে এর অসাধারণ কার্যকারিতা এবং নির্ভুলতা প্রদর্শিত হয়েছে। এখানে AASM/HAMMER পিপিআর সিস্টেম, PAVEWAY লেজার-গাইডেড বোমা এবং ৩০ মিমি কামান ব্যবহার করা হয়েছে। রাফালে বিমানটি সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে সামরিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।

রাফালে যুদ্ধবিমানটি ফ্রান্সের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাল্টি-রোল ফাইটার জেট হিসেবে পরিচিত। এর অপারেশনাল সক্ষমতা, লম্বা পরিসর, এবং একাধিক সামরিক মিশনে সফলতার মাধ্যমে এটি এক অভূতপূর্ব সামরিক যন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।