বৃহস্পতিবার রাতে মুসলিম বিশ্বে পবিত্র শবে কদর
পবিত্র শবে কদর: কোরআনের আলোকে বিশ্লেষণ
টুইট ডেস্ক: বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) রাতে মুসলিম বিশ্বে পবিত্র শবে কদর পালিত হবে। ইসলাম ধর্মের দৃষ্টিতে এই রাতটি অসীম মর্যাদাপূর্ণ, কারণ এই রাতে মহান আল্লাহ মানবজাতির সর্বোত্তম পথনির্দেশক গ্রন্থ, পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেন।
কোরআনে এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে, যা এর বিশেষ ফজিলতের প্রমাণ বহন করে।
শবে কদরের গুরুত্ব: কোরআনের আলোকে
কোরআনের সাক্ষ্য
শবে কদরের মর্যাদা সম্পর্কে কোরআনের সূরা আল-কদর-এ স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে—
> إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
অর্থ: “নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জান, কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।”
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, শবে কদরের গুরুত্ব এত বেশি যে, এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াবের সমান।
ফেরেশতাদের আগমন ও শান্তির রাত
> تَنَزَّلُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ سَلَـٰمٌ هِىَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ ٱلْفَجْرِ
অর্থ: “সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিব্রাইল) তাঁদের রবের নির্দেশক্রমে প্রত্যেক বিষয়ে অবতরণ করেন। এটি শান্তির রাত, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত স্থায়ী হয়।”
এটি এমন এক বরকতময় রাত, যখন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভের সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যায়।
শবে কদরে কোরআন নাজিলের ঘোষণা
> شَهْرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِىٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلْقُرْءَانُ هُدًۭى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَـٰتٍۢ مِّنَ ٱلْهُدَىٰ وَٱلْفُرْقَانِ
অর্থ: “রমজান মাস, যাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং সত্যপথের স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ।”
এটি প্রমাণ করে, শবে কদর মানবজাতির জন্য হেদায়াত ও মুক্তির দ্বার উন্মোচন করেছে।
শবে কদরের ফজিলত
গুনাহ মাফ ও রহমতের রাত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
> “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের আশায় শবে কদরের রাত জাগরণ করে ইবাদত করবে, তার আগের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।”
এই হাদিস অনুযায়ী, এই রাত ইবাদতের মাধ্যমে জীবনের সকল গুনাহ মাফ করার সুযোগ এনে দেয়।
শবে কদরে দোয়া ও ইস্তেগফার
হজরত আয়িশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন—
> “হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি শবে কদর পাই, তাহলে কী দোয়া পড়বো?”
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এই দোয়া পড়বে—
> اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
শবে কদর পালনের আমল
এই রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা সম্ভব।
এই রাতে তাহাজ্জুদ, নফল নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত করার গুরুত্ব অপরিসীম।
কোরআন তেলাওয়াত
যেহেতু এই রাতে কোরআন নাজিল হয়েছে, তাই বেশি বেশি কোরআন পাঠ করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ।
জিকির ও দরুদ পাঠ
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
> “যে ব্যক্তি একবার দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার রহমত বর্ষণ করবেন।”
এ কারণে বেশি বেশি দরুদ ও জিকির করা উচিত।
শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন
বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে শবে কদর উপলক্ষে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়ে থাকে।
সরকারি ছুটি ও বিশেষ কর্মসূচি
২৮ মার্চ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের প্রতিটি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার শবে কদর উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
ব্যক্তিগত আমল ও ইবাদত
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সারারাত জেগে ইবাদত করবেন।
কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবেন।
আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে শবে কদরের ফজিলত অর্জনের প্রয়াস চালাবেন।
শবে কদর মুসলমানদের জন্য এক অনন্য সুযোগ, যখন আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াবের অধিকারী, যা প্রতিটি মুসলমানের জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়।
তাই আমাদের উচিত এই রাতের ফজিলত অনুধাবন করে যথাযথভাবে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত হওয়া।
আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে এই বরকতময় রাতের রহমত ও মাগফিরাত লাভের তৌফিক দান করেন, আমিন।