বল্টিমোরে জাহাজের দুর্ঘটনার পূর্ববর্তী সংকেতের মাধ্যমে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা

বল্টিমোরে জাহাজের ধাক্কায় ভেঙে পড়া ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বল্টিমোরে মঙ্গলবার ভোরে ১.৬ মাইল দীর্ঘ ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজের একটি সাপোর্ট পিলারে একটি জাহাজ ধাক্কা দেয়ার পর সেতুটি নদীতে ভেঙে পড়েছে। এতে সেতুটিতে থাকা যানবাহন নদীতে পড়ে যায়। উদ্ধারকারীরা এখনও নদীতে উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইউটিউবে প্রকাশিত একটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, অন্ধকারে সেতুটির সঙ্গে একটি জাহাজের সংঘর্ষ হচ্ছে। জাহাজটি সেতুর পিলারে আঘাত করার পরপরই সেতুটির বিশাল স্প্যানগুলো ভেঙে পাটাপস্কো নদীতে পড়ে যেতে থাকে এবং জাহাজটিতে সংঘর্ষের সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।

বল্টিমোর পুলিশ জানিয়েছে, তাদেরকে মঙ্গলবার প্রথম প্রহরে স্থানীয় সময় রাত ১টা ৩৫ মিনিটে ঘটনাটির বিষয়ে অবহিত করা হয়।

ফায়ার ডিপার্টমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, অন্তত ২০জন ব্যক্তি সেতু থেকে পানিতে পড়ে গিয়েছিলেন। সংখ্যাটি নিশ্চিত করার জন্য ফায়ার ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

ফায়ার ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং উদ্ধারকারীরা এখনও নিখোঁজ ৭ ব্যক্তির সন্ধান করছেন।

বল্টিমোর ফায়ার ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর অফ কমিউনিকেশন্স কেভিন কার্টরাইট রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা রাত দেড়টার দিকে বেশ কয়েকটি জরুরি কল পাই। আমাদেরকে জানানো হয় যে, একটি নৌযানের ধাক্কায় বল্টিমোরের কি ব্রিজটি ধ্বসে পড়েছে। এই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং আমরা নদীতে পড়ে যাওয়া সাতজন ব্যক্তির খোঁজ করছি।’

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানিয়েছে, সেতুটি ভেঙে পড়ায় সেটিতে থাকা বেশ কয়েকটি যানবাহন পানিতে পড়ে যায়।

এলএসইজি থেকে প্রাপ্ত শিপ ট্র্যাকিং ডেটা থেকে দেখা গেছে, সেতুটিতে ধাক্কা দেয়া সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী ডালি নামের জাহাজটি গ্রেইস ওশান পিটিই লিমিটেড নামক কোম্পানির মালিকানাধীন। জাহাজটির ম্যানেজার সিনার্জি মেরিন গ্রুপ।

সিনার্জি মেরিন কর্পোরেশন জানিয়েছে, সেতুটির একটি পিলারের সঙ্গে জাহাজটির সংঘর্ষ হয় ও এই ঘটনায় জাহাজটির দুইজন পাইলটসহ সব ক্রু সদস্যকে দায়ী করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এই বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেইস ওশান এর মন্তব্য জানতে পারেনি রয়টার্স।

দুর্ঘটনার বিষয়ে ম্যারিল্যান্ড ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি এক এক্সবার্তায় জানিয়েছে, ‘আই-সিক্স নাইন ফাইভ কি ব্রিজের দুর্ঘটনার কারণে উভয় দিকের সবগুলো লেন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ট্রাফিক বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজের ধাক্কায় ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ ধসে পড়ে। তবে এ দুর্ঘটনার আগে জাহাজটি একটি সংকেত পাঠিয়েছিল, যা সেতুতে ওঠার মুখে গাড়ি থামানোর সুযোগ নিয়েছিল। ফলে অনেক গাড়ি সেতুতে থামিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল এবং এতে অনেক মানুষের জীবন রক্ষা হয়েছে। এই তথ্যটি মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েজ মুর একটি সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করেছেন, যা সিএনএন প্রকাশিত।

যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোরে একটি কন্টেইনার জাহাজের ধাক্কায় চার লেনবিশিষ্ট ফ্রান্সিস স্কট কি সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ে।

সেতু ধসের ঘটনাকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এ ঘটনায় নদীতে নিখোঁজ ব্যক্তিদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমকে এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু করতে সেনাবাহিনীও যুক্ত হয়েছে।

অন্যদিকে এফবিআই জানিয়েছে, এই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের সংশ্লিষ্টতার কোনো গ্রহণযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি।

বাল্টিমোর বন্দর এখনো বন্ধ রয়েছে। কখন সেখানে আবার কার্যক্রম শুরু হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তবে অর্থনৈতিকভাবে এই বন্দরটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এই দুর্ঘটনার প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০০৭ সালের পর সবচেয়ে বড় মার্কিন সেতু ধসের ঘটনা এটি। ওই দুর্ঘটনায় মিনিয়াপোলিসের আই-৩৫ডব্লিউ সেতু মিসিসিপি নদীতে ধসে পড়ে। তাতে ১৩ জন নিহত হন।