বাইডেন-নেতানিয়াহু সম্পর্ক তলানিতে

টুইট ডেস্ক : যুগের পর যুগ ধরে ইসরায়েলের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধের ময়দান থেকে শুরু করে বিশ্ব কূটনীতি-সব জায়গায় ইসরায়েলের ঢাল হিসেবে কাজ করছে দেশটি। এমনকি গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে তেল আবিবকে অন্ধের মতো সহায়তা ও সমর্থন দিয়ে আসছিল ওয়াশিংটন।

তবে গাজায় ব্যাপক প্রাণহানি ও মানবিক সংকট ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কে বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। তাই এতদিন নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলবিরোধী সব প্রস্তাবে বাধা দিলেও গতকাল সোমবার ভেটো দেয়নি আমেরিকা।

গতকাল সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্য।

ভোটাভুটিতে চার স্থায়ী সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন এবং ১০ অস্থায়ী সদস্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এ ছাড়া প্রস্তাবে ভোটদান থেকে বিরত থাকলেও কোনো ভেটো দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

তাই এবারের মতো গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আলোর মুখে দেখেছে। যুদ্ধবিরতি ছাড়াও গাজায় হামাসের হাতে বন্দি সব ইসরায়েলিকে মুক্তি দেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত অক্টোবরে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় ৩২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। যুদ্ধ শুরুর পর বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসে নিরাপত্তা পরিষদে চেষ্টা হয়েছে। তবে প্রায় সব বারই যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় সেগুলো পাস হয়নি।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। এমনটা হওয়ার পেছনে একটাই কারণ। সেটি হলো নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাস। এই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদানে বিরত থাকলেও ভেটো দেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপের জবাব দিতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করেনি ইসরায়েল। গাজার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় আসন্ন অভিযান নিয়ে আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা ছিল একটি উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলের। তবে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাসের সঙ্গে সঙ্গে সেই সফর বাতিল করেছে তেল আবিব।

রাফায় অভিযান নিয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মার্কিন চাপ অপেক্ষা করে যদি ইসরায়েল রাফায় অভিযানে যায় তাহলে সামরিক সহায়তা বন্ধের মতো বিষয় সামনে এসে পড়েছে।

তাই বেশ কয়েক দিন ধরে রাফায় ইসরায়েলি অভিযানের বিকল্প খুঁজছে বাইডেন প্রশাসন। সেই জন্য বেশ কাঠখড়ও পুড়িয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে ইসরায়েল বৈঠক স্থগিত করার কারণে সেই প্রচেষ্টায় নতুন করে বাধা দেখা দিল।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক বাইডেন প্রশাসন। তারা বিষয়টি ইসরায়েলিদের বাড়াবাড়ি বলে মনে করছেন। মার্কিন রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সাবেক আলোচক অ্যারন ডেভিড মিলার বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে বিশ্বাসে ছেদ পড়বে। যদি এই সংকট ভালোভাবে সামাল না দেওয়া হয় তাহলে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।