বড় ব্যবধানে জয়ী পুতিন

টুইট ডেস্ক: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রোববার (১৭ মার্চ) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। হাজার হাজার বিরোধিরা ভোটকেন্দ্রে দুপুরে বিক্ষোভ করলেও রাশিয়ায় তার ক্ষমতা আরও দৃঢ় হয়েছে। আমেরিকা বলেছে, নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি৷

কেজিবির সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল পুতিন ১৯৯৯ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসেন।

নির্বাচনের এই ফলাফলের উদ্দেশ্য পশ্চিমাদের বোঝানো যে, রাশিয়ার নেতাদের আগামী আরও অনেক বছর ধরে যুদ্ধে বা শান্তিতে এক সাহসী রাশিয়াকে গণনা করতে হবে।

এই জয়ের ফলে ৭১ বছর বয়সী পুতিন সহজেই আরও ৬ বছরের জন্য নতুন মেয়াদ নিশ্চিত করলেন। এতে তিনি জোসেফ স্ট্যালিনকে ছাড়িয়ে ২০০ বছরের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা নেতা হবেন।

জনমত জরিপ পাবলিক ওপিনিয়ন ফাউন্ডেশনের (এফওএম) বুথফেরত জরিপে দেখা গেছে, পুতিন ৮৭.৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, যা সোভিয়েত পরবর্তী রাশিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ। রাশিয়ান পাবলিক ওপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টার (ভিসিআইওএম) জানিয়েছে, পুতিন ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। প্রাথমিকভাবে আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, জরিপ সঠিক।

কমিউনিস্ট প্রার্থী নিকোলাই খারিতোনভ ৪ শতাংশের কিছু কম ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন, নবাগত ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ তৃতীয় এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী লিওনিদ স্লুতস্কি চতুর্থ হয়েছেন।

হোয়াইট হাউজের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেন, ‘পুতিন যেভাবে রাজনৈতিক বিরোধীদের কারাবন্দি করেছেন এবং অন্যদের তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে বিরত রেখেছেন, তাতে অবশ্যই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।’

ইউক্রেনে আগ্রাসনের নির্দেশ দিয়ে পুতিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে প্রাণঘাতী ইউরোপীয় সংঘাত শুরু করার মাত্র ২ বছর পর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি এই অভিযানকে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ বলে অভিহিত করেছেন।

তিন দিনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আক্রমণ সীমিত করেছে রাশিয়া। ইউক্রেন বেশ কয়েকবার রাশিয়ার তেল শোধনাগারে হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে গুলি চালিয়েছে এবং প্রক্সি বাহিনী দিয়ে রাশিয়ার সীমানা ভেদ করার চেষ্টা করেছে। পুতিন বলেছেন, এই পদক্ষেপের কারণে শাস্তি পেতে হবে।

রাশিয়ার ওপর পুতিনের নিয়ন্ত্রণ এবং সত্যিকারের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর অনুপস্থিতির কারণে পুতিনের পুনরায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকলেও সাবেক এই কেজিবি কর্মকর্তা দেখাতে চেয়েছেন যে, তার প্রতি রাশিয়ানদের অপ্রতিরোধ্য সমর্থন রয়েছে।

নির্বাচনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার সময় দেশব্যাপী ভোটদানের হার ছিল ৭৪.২২ শতাংশ, যা ২০১৮ সালের ৬৭.৫ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে।

গত মাসে আর্কটিক কারাগারে মারা গিয়েছেন পুতিনের সবচেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যালেক্সেই নাভালনি। তার সমর্থকরা রাশিয়ানদের ‘নুন অ্যাগেইনস্ট পুতিন’ বিক্ষোভে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তারা পুতিনকে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

হাজার হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তার কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে রাশিয়ার ১১৪ মিলিয়ন ভোটারের মধ্যে কতজন বিরোধিদের বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে তার কোনো স্বতন্ত্র হিসাব পাওয়া যায়নি।

রয়টার্সের সাংবাদিকরা মস্কো, সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং ইয়েকাতেরিনবার্গের ভোটকেন্দ্রগুলোতে দুপুরে ভোটারদের, বিশেষত তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখেছেন। সেখানে তারা হাজারো ভোটারের লাইন লক্ষ্য করেছেন।