জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়ায়: ২৩ বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে

ছবি সংগৃহীত

টুইট ডেস্ক: জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই জলদস্যুরা সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের কবলে পড়া কয়লাবাহী বাংলাদেশি জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজে থাকা এক নাবিক।

ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়া বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহতে থাকা ২৩ বাংলাদেশি নাবিকের পরিচয় জানা গেছে। এই জাহাজের মূল তথ্য ও তাদের পেশাদার বিবরণ গত ৪ মার্চ তৈরি করা ওই জাহাজের একটি ক্রু লিস্ট থেকে তাদের পরিচয় জানা যায়।

* মাস্টার: চট্টগ্রামের রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর
* চিফ অফিসার: চট্টগ্রামের খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ
* সেকেন্ড অফিসার: চট্টগ্রামের চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম
* থার্ড অফিসার: ফরিদপুরের ইসলাম মো. তারেকুল
* ডেক ক্যাডেট: টাঙ্গাইলের হোসাইন মো. সাব্বির
* চিফ ইঞ্জিনিয়ার: নওগাঁর শাহিদুজ্জামান এ এস এম
* সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার: খুলনার ইসলাম মো. তৌফিকুল
* থার্ড ইঞ্জিনিয়ার: নেত্রকোণার উদ্দিন মো. রোকন
* ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার: চট্টগ্রামের আহমেদ তানভীর
* ইঞ্জিন ক্যাডেট: লক্ষ্মীপুরের থান আইয়ুব
* ইলেকট্রিশিয়ান: উল্লাহ ইব্রাহিম খলিল
* এবিল সি-ম্যান (নাবিক): নোয়াখালীর হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল
* সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল
* ওয়ালার: চট্টগ্রামের হক আইনুল
* শামসুদ্দিন মোহাম্মদ
* বরিশালের হোসাইন মো. আলী
* ফায়ারম্যান: চট্টগ্রামের শাকিল মোশাররফ হোসেন
* চিফ কুক: চট্টগ্রামের ইসলাম মো. শফিকুল
* জেনারেল স্টুয়ার্ড: চট্টগ্রামের উদ্দিন মোহাম্মদ নূর
* ফাইটার: নোয়াখালীর আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। জিম্মি এক নাবিক জানিয়েছে, জাহাজটিকে সোমালিয়ান উপকূলের দিকে নেওয়া হচ্ছে।

২০১৬ সালে তৈরি জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্ত ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।

জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই জলদস্যুরা সেটিকে সোমালিয়া উপকূলের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। বর্তমানে জাহাজটি সোমালিয়ার বন্দরে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন জাহাজে থাকা এক নাবিক।

এদিকে, জাহাজের ২৩ নাবিককে জিম্মি করেছে দস্যুরা। তাদের মধ্যে কয়েকজন বাঁচার আকুতি জানিয়ে অডিও বার্তা দিয়েছেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এরপর অন্তত ১০০ জলদস্যু জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বর্তমানে ২৩ নাবিককে কেবিনে রাখা হয়েছে।

জাহাজে থাকা এক নাবিক জানান, প্রায় শতাধিক জলদস্যু ছোট ছোট বোটে করে প্রথমে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে। পরে তারা সশস্ত্র অবস্থায় জাহাজে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয়। এ সময় নাবিক ও ক্রুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে জলদস্যুরা কোনো নাবিকের ওপর হামলা চালায়নি।

এম ভি আবদুল্লাহ জাহাজটি এস আর শিপিংয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছিল। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে দুবাই আসছিল পণ্যবাহী জাহাজটি। মালিকপক্ষ জিম্মি ঘটনার সতত্য নিশ্চিত করে নাবিকদের ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরেই সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের এম ভি জাহান মনি নামে অপর একটি জাহাজ। জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রেখেছিল সোমালিয়ান জলদস্যুরা। পরবর্তীতে নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।