গ্রাহকদের অভিযোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফল সমাধান : বিবি’র প্রতিবেদন
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যাংকগুলির বিরুদ্ধে গ্রাহক অভিযোগ বাড়ছে এবং জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে প্রায় ১ হাজার ৭০০ অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। এই অভিযোগের মধ্যে ৯০ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বেশিরভাগ অভিযোগ সেন্ট্রাল ব্যাংক দ্বারা সমাধান হয়েছে।
একইভাবে, বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৬৮৭টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, যেগুলির মধ্যে ১ হাজার ৫২৪টি নিষ্পত্তি হয়েছে। এই অভিযোগের মধ্যে টেলিফোনের মাধ্যমে ৩৫৩টি অভিযোগ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নিষ্পত্তি বা সমাধান হয়েছে। অভিযোগগুলি ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ, এবং ডাকযোগের মাধ্যমেও করা হয়েছে।
সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্রে (সিআইপিসি) ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৭০০ অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। অভিযোগের প্রায় ৯০ শতাংশই নিষ্পত্তি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গ্রাহকদের অভিযোগের মধ্যে বেশিরভাগই সচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহের অভাব দুটি কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়েছে। ব্যাংকগুলি প্রতিনিয়ত নতুন পণ্য বা সেবা বৃদ্ধি করতে থাকলেও, এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়না, যা কিছুটা ক্ষুদ্র সমস্যার জন্যও গ্রাহকদের অভিযোগ করতে উত্তেজনা করতে পারে। তবে, ব্যাংকগুলি এই ধরনের অভিযোগগুলি সমাধান করতে সক্ষম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে গ্রাহকসংখ্যা নিশ্চিত করতে এই ব্যাংক গ্রাহকস্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র (সিআইপিসি) গঠন করা হয়। এরপর একটি নতুন বিভাগ, ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস এফআইসিএসডি) নামে রূপ নেয় এবং এই বিভাগ ব্যাংকিং সেবা সংক্রান্ত যে কোনো অভিযোগ দেওয়া যায়। অভিযোগ করার জন্য গ্রাহকরা ই-মেইল, ওয়েবসাইটে নির্ধারিত ফরমে অনলাইনে, মোবাইল অ্যাপ, টেলিফোন এবং ডাকযোগে পাঁচটি উপায় ব্যবহার করতে পারে। সমাধানের জন্য সরাসরি ১৬২৩৬ এই নম্বরে ফোন করতে পারেন। এছাড়া, জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করা হয়েছে স্বীকৃত বিলের বিপরীতে অর্থ না পাওয়া, ঋণ ও অগ্রিম, সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগ।
বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা বেশি এবং তাদের গ্রাহকসংখ্যা অধিক। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেশি হয়েছে এটা স্বাভাবিক। এছাড়া, বেসরকারি ব্যাংকের পণ্য বেশি এবং তাদের ক্রেডিট কার্ড ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সিস্টেম সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেশি সম্পূর্ণ বিবেচনা করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে, গত বছরে ব্যাংকগুলির বিরুদ্ধে মোট ১০ হাজার ৫৪২টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, যেগুলির মধ্যে ৮ হাজার ৬৮২টি নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির হার ছিল ৮২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত জানুয়ারি মাসে প্রায় ১ হাজার ৬৮৭টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, যেগুলির মধ্যে ৯০ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। এই অভিযোগগুলি টেলিফোন, ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ এবং ডাকযোগের মাধ্যমে করা হয়েছে।
বিপরীতে অর্থ না পাওয়া, ঋণ ও অগ্রিম এবং সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেন। এছাড়া রেমিট্যান্স, কার্ড সেবা, ব্যাংক গ্যারান্টি, কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া, অতিরিক্ত ফি ও চার্জ, মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রটিপূর্ণ নোট বিনিময় এবং চেক সংক্রান্ত অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে গ্রাহকরা মোট ৭৩ হাজার ২৪৮টি অভিযোগ করেন। এর মধ্যে টেলিফোনের মাধ্যমে ২৬ হাজার ২১১টি, যার সব কয়টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এছাড়া ৪৭ হাজার ৩৭টি অভিযোগ করা হয় ই-মেইল, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ এবং ডাকযোগে, যার মধ্যে ৪৬ হাজার ৭৯৩টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি ২৪৪টি অভিযোগ এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত মোট ৭৩ হাজার চারটি নিষ্পত্তি হয়েছে, যা মোট অভিযোগের ৯৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
অভিযোগগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ নিষ্পত্তি এলে অপরাধ বা বিষয়ের ধরনের ওপর নির্ভর করে। যেগুলো তৎক্ষণাৎ নিষ্পত্তি করা যায়, সেগুলো তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হয়। আর যেগুলোতে আইনি জটিলতা থাকে সেগুলোতে সময় লাগে। অনেক সময় অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলতে হয়। আসল কারণ বের করে তারপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হয়। এগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কাজ।
এদিকে গত বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকে ১৭৬টি পরিদর্শন কার্যক্রম চালানো হয়। আর চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালানো হয়েছে আটটি পরিদর্শন।