ব্যাংকের এমডি নিয়োগে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের পারফর্ম্যান্স যোগ হবে

বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনুসারে, এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) নিয়োগ এবং পুনঃনিয়োগ এখন অবলোপনকৃত ঋণ পুনরুদ্ধারে নির্ভর করবে এবং এই ক্ষেত্রে তাদের পারফর্ম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হবে। এছাড়া, ঋণ অবলোপনের সময় তিন বছর থেকে কমিয়ে দুই বছর করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসারে, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নিয়োগ এবং পুনঃনিয়োগ নির্ভর করবে অবলোপনকৃত ঋণ পুনরুদ্ধারে তাদের পারফর্ম্যান্সের ওপর।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকগুলোতে অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট গঠন ও এর কার্যাবলি নিয়ে বিস্তারিত নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

‘বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তির শর্তের আলোকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ যথাক্রমে ১০ শতাংশ ও ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে চায়।’

ব্যাংকগুলোর খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ হ্রাস ও সুশাসন নিশ্চিত করতে একটি ‘রোড ম্যাপ’-এর মধ্যে ১১টি কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে।

অবলোপন একটি অন্যতম কর্মপদ্ধতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায় বলা হয়, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা অনুযায়ী রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে এমন নীতিমালা করা হয়েছে।

অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে আদায়কৃত অর্থের ৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে ঋণ আদায়ে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের মাঝে বিতরণযোগ্য হবে। বিতরণযোগ্য অর্থের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাবেন।

ভবিষ্যতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা হলে ব্যাংকগুলো তাদের অবলোপনকৃত ঋণ বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালায়।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অথবা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ইউনিট গঠন হবে। এর জন্য উল্লেখিত কর্মকর্তার দুই ধাপ নিচে নন, এমন একজন কর্মকর্তাকে ইউনিটের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে।

অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে উক্ত ইউনিট কর্তৃক মাসিক সভা করতে হবে। সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ কার্যবিবরণী আকারে লেখা থাকবে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.২৬ লাখ কোটি টাকা, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৭ শতাংশ।

‘বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে বলেছিল, নতুন এই অবলোপন নীতিমালার মাধ্যমে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি বা মোট খেলাপি ঋণের ২.৭৬ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব।’

২০২৩ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতের মোট অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এছাড়া বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১.৪৫ লাখ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ।

নতুন নীতিমালায়, কোনো মৃত ব্যক্তির ঋণ যে শ্রেণিমানেরই হোক, তার নিজের নামে কিংবা একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া ঋণ ব্যাংক নিজ বিবেচনায় অবলোপন করতে পারবে। তবে একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির উপার্জনক্ষম উত্তরসূরি রয়েছে কি না, তা বিবেচনায় নিতে হবে।

ঋণ অবলোপন পদ্ধতি

কোনো ঋণের বিপরীতে বন্ধকিকৃত সম্পত্তি নিয়ম অনুযায়ী বিক্রির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হলে এবং ঋণের জামিনদার (গ্যারান্টর) পাওনা অর্থ পরিশোধে সমর্থ না হলে সেই ঋণ অবলোপনের আওতায় আসবে।

অবলোপনের জন্য প্রতিটি ঋণের ক্ষেত্রে সংরক্ষিত প্রভিশন না থাকলে ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। তবে কোনো ঋণ আংশিকভাবে অবলোপন করা যাবে না।

অবলোপনকৃত ঋণ আদায় ও তদারকি

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, অবলোপনের পরও ব্যাংকের ঋণের দাবি বহাল থাকবে। একইসঙ্গে আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

ঋণ আদায়ের ইউনিটে দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিতে হবে। ন্যূনতম একজন আইন ডিগ্রিধারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।

ব্যাংকের তিন মাস পরপর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় ঋণ আদায়ের তথ্য উপস্থাপন করতে হবে এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দক্ষ আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে।

এ নীতিমালা জারির পর ১৫ দিনের মধ্যে অবলোপন ইউনিট গঠন করতে হবে, এবং ৩০ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।