কারা যোগ দিলেন তৃণমূল বিএনপিতে
টুইট নিউজ : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে আর সময় আছে প্রায় দুই মাস। ফলে দিন যতই কমে আসছে, রাজনীতির মাঠ ততই সরব হচ্ছে। নানা কর্মকান্ড চালিয়ে ও সভা সমাবেশ করে নিজের অবস্থান জানান দিতে চাইছে ছোট দলগুলোও।
আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে নতুন একাধিক দলও মাঠে নেমেছে। বিএনপির নেতাদের একটা অংশকে বের করে এনে নতুন দলও গঠন করা হয়েছে। বুধবার নতুন নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি নতুন নেতাকর্মীদের যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু নামসর্বস্ব দলের নেতাও রয়েছেন। তবে বিএনপিসহ অন্য কোনো দলের কেন্দ্রীয়, পদধারী, সুপরিচিত বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা নতুন এ দলে যোগদান করেননি। যদিও তৃণমূল বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্য দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের তৃণমূল বিএনপিতে যোগ না দেওয়া এবং সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কারা হবেন- সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যোগদান অনুষ্ঠান শেষে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তাকিয়ে দেখেন কী কী হয়, কারা কারা আসেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় যোগদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। দলে নতুন যোগ দেওয়া নেতাকর্মীদের রজনীগন্ধা দিয়ে বরণ করে নেন তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার।
শুরুতে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সিরাজুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা কর্নেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, টাঙ্গাইল-৫ আসনের বাসিন্দা শরিফুজ্জামান খান ও সাভার থেকে আসা আইনজীবী মাহবুব হাসান তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করেন।
এরপর বিভিন্ন সংসদীয় আসনের বাসিন্দা ও বিভিন্ন দলের কর্মী পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেন। টাঙ্গাইল-৪ আসনের বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম দলে যোগ দিয়ে বলেন, ‘আমি শিক্ষকতা পেশায় ছিলাম। কারও প্ররোচনায় নয়, নিজের ইচ্ছায় এই দলে যোগ দিয়েছি।’
কুমিল্লা-২ আসনের বাসিন্দা মাঈনুদ্দীন নিজেকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন পার্টির মহাসচিব বলে পরিচয় দেন। বাগেরহাট-৪ আসনের আবুল বাশার চৌধুরী বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টির মহাসচিব বলে পরিচয় দেন।
নেত্রকোনা-২ আসনের মোহাম্মদ আলী ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সন্তোষ শর্মা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, ফেনী-৩ আসনের খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া বিএনপির, আইভি সরকার জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং লস্কর হারুনুর রশীদ এলডিপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান।
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সন্তোষ সারমা, জয়পুরহাটের মাসুদ রেজা, নরসিংদীর নাজমুল শিকদার, শাহাদাত হোসেন, নেত্রকোনার শওকত তালুকদার, শহিদুল ইসলাম, মানিকগঞ্জের শেখ শাহিনুর রহমান, পটুয়াখালীর এনায়েতুল ইসলাম, জয়পুরহাটের মোবারক, নওগাঁর অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেব, খুলনার নাদির উদ্দিন খান, নেত্রকোনার মজিবুর রহমান খান, খুলনার হাফিজুল ইসলাম, জয়পুরহাটের আবুল বাশার চৌধুরী, ফেনীর খায়েজ আহমেদ ভূঁইয়া, গোপালগঞ্জের চার্লস বৌদ্ধ, ঢাকা-১৭ আসনের আবু বৌদ্ধ, নোয়াখালীর সৈয়দ আহমেদ, কক্সবাজার মোহম্মদ শাহ আলম, বগুড়ার সুমন মন্ডল, আবু রায়হান, সাজিদ খান, চট্টগ্রামের শাহাদাত চৌধুরী, পটুয়াখালীর দলিল উদ্দিন, টাঙ্গাইলের শরিফুজ্জামান খান প্রমুখ।
তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় সবাই বিএনপির সমালোচনা করেন। তারা অভিযোগ করেন, জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। উন্নয়নের মহাসড়কে আছে দেশ, এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপি মূল বিরোধী দল হবে বলে তাঁদের কেউ কেউ প্রত্যাশা করেন।
কর্মী যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির চেয়ারপারসন সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলের জাতীয় কাউন্সিল হয়, আজ ৮ নভেম্বর অসংখ্য নেতাকর্মী তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করেছেন। তৃণমূল বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন তার ক্ষমতা অক্ষরে অক্ষরে প্রয়োগ করে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে।’
নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমশের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল বিএনপি ৩০০ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে প্রার্থী দেবে। জ্বালাও-পোড়াও হত্যার রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাস করি না। সেটা লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা হোক কিংবা পেট্রল বোমা দিয়ে হত্যা হোক।’
তৃণমূল বিএনপি কোনো প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হবে না জানিয়ে দলের মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এটি হবে জনগণের দল। দলের প্রত্যেক সদস্য হবেন এই দলের নেতা। তৃণমূল বিএনপির কেন্দ্র যাবে তৃণমূলের কাছে। তৃণমূল বিএনপি হবে বাংলাদেশের তৃণমূল কংগ্রেস।
তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা। তিনি ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই দফায় খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। ১৯ সেপ্টেম্বর দলের প্রথম সম্মেলন ও কাউন্সিলে আংশিক কমিটি নির্বাচন করা হয়।