পাকিস্তানে ফল প্রকাশে দেরি, সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ

টুইট ডেস্ক: পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (৮ ফেবব্রুয়ারি) বিকেল ৫টায়। কিন্তু এরপর ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনও আনুষ্ঠানিক ফলাফল পাওয়া যায়নি।

যদিও নির্বাচনের আগে এক বিবৃতিতে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি) বলেছিল, শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের মধ্যে তারা আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ করবে। এমতাবস্থায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার পর থেকে শুরু হয় পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনা। এক ঘণ্টা পর গণমাধ্যমে বেসরকারি ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ১২ ঘন্টারও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর ফলাফল আসতে শুরু করে। এ বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষরা বলছেন, দেশটির অতীতের নির্বাচনগুলো বিবেচনায় নিলে এবারের ফল ঘোষণায় এতটা দেরি হওয়া অস্বাভাবিকই বটে।

ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের অভিযোগ, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সমর্থিত প্রার্থীদের জয়ী হতে দেখে নির্বাচনের ফল ঘোষণায় বিলম্ব করা হচ্ছে। অনেক জায়গায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে টানানো পর্দায় ফলাফল প্রদর্শিত হচ্ছিল। তা-ও বন্ধ করে দেয়া হয় বলেও অভিযোগ দলটির নেতাদের।

এদিকে, ইসলামাবাদ থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক কামাল হায়দার বলেছেন, আগের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনীর যে বিশাল ভূমিকা ছিল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এই মুহুর্তে যা ঘটছে তার সঙ্গে সামরিক বাহিনী জড়িত আছে তা দাবি করাও কঠিন।

পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনার বরাবরই পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্ট। দেশটির সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২২০ অনুযায়ী, নির্বাচনকালে তিনিই সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। নির্বাচনের সময় সমস্ত নির্বাহী ক্ষমতা তার কাছে থাকে এবং সামরিক বাহিনী তার অধীনেই থাকে। তাই এখন প্রশ্ন উঠেছে, নিচের কর্মকর্তারা কি ঊর্ধ্বতনকে আদেশ দিচ্ছেন, নাকি তার উল্টোটা হচ্ছে?

ফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশটির জনগণও। ৫৫ বছর বয়সী আসিফ কুরেশি আল জাজিরাকে বলেনে, গতবারের মতো নির্বাচন হলেও আমরা এবার ভোট দিয়েছি। আমরা এখন ডিজিটাল যুগে আছি। ভোটের ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেলেও আমরা এখনও ফল জানিনা। তারা অজুহাত দিচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। কিন্তু তারাই এটি বন্ধ করেছিল।

বৃহস্পতিবার ভোট শুরু হওয়ার আগেই ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর সারাদিনই তা বন্ধ ছিল। এতে ভোটাররা বিপাকে পড়েন। বিষয়টির নিন্দা জানিয়েছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।

কুরেশি বলেন, পিটিআই প্রার্থীরা জিতবে ভেবে আমরা ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টোটা। কেন শুধু শুধু এত টাকা খরচ করা হচ্ছে? তারা বিজয়ী হিসেবে যাকে বেছে রেখেছেন তার নাম ঘোষণা করে দিলেই হয়।

এদিকে, বিবিসিকে লাহোরের সুবহান নামের এক দোকানী বলেন, এটা আসলে জনগণের নির্বাচন না। কারা নির্বাচিত হবে তাদের আগেই ঠিক করা আছে। প্রথমে তারা দেখালো একটি দল হারছে। তারপর ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হলো। আর সকালে খবর পেলাম এর ঠিক উল্টো।

তিনি আরও বলেন, `আমার মনে হয় না এই নির্বাচন কোনো পরিবর্তন আনবে। আমার তাদের কাছে থেকে কোনো আশা নেই।’

নির্বাচন কমিশেনের প্রকাশিত সবশেষ তথ্যানুসারে, ২৬৫টি আসনের মধ্যে ১৪৬টি আসনের আনুষ্ঠানিক ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬২টি আসনে জয়লাভ করে এগিয়ে আছে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্ররা। নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এন পেয়েছে ৪৬টি আসন। পিপিপি পেয়েছে ৩৭টি, জেইউআই-এফ পেয়েছে মাত্র ১টি আর অন্যান্যরা পেয়েছে ৮টি আসন।