বিএনপি-জামায়াতের তৃতীয় দফার অবরোধে দূরপাল্লার বাস বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি-জামায়াতের তৃতীয় দফায় ডাকা দুইদিনের অবরোধ শুরু হয়েছে। বুধবার সকালে দিনের শুরুতে নগরীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল প্রায় বন্ধ থাকলেও ঢাকাসহ দেশের অভ্যান্তরীণ সড়কে কিছু যানবাহন চলাচল দেখা গেছে। তবে সারা দেশে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
অবরোধের সমর্থনে মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকালে চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী, ভোলা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করেছে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দলটি ঢাকায় গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে।
২৯ অক্টোবর হরতালের পর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত প্রথম দফায় তিনদিনের সর্বাত্মক অবরোধ পালন করেছিলো বিএনপি। এরপর দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটির দিনের পর ৫ ও ৬ নভেম্বর আবারো অবরোধ পালন করে দলটি। ৭ নভেম্বর বিরতি দিয়ে আজ ৮ নভেশ্বর বুধবার থেকে আবার দুদিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি-জামায়াত।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দেশজুড়ে নেতাকর্মীর এই সর্বাত্মক অবরোধ সফল করার আহবান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সারাদেশে তার দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়িতে পুলিশের তল্লাশির দাবি করে এর তীব্র সমালোচনা করেছেন।
বিএনপি-জামায়াত ছাড়াও তাদের যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কিছু সমমনা দল আজ ও কাল সর্বাত্মক অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে হরতাল-অবরোধ চলার সময় সারাদেশে যাত্রীবাহী বাসসহ বেশ কিছু যানবাহনে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দ্বিতীয় দফার ৪৮ ঘন্টার অবরোধে ৩১টি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছিল।
তৃতীয় দফার অবরোধের শুরুতে রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। বাস টার্মিনালগুলোতে দূরপাল্লার বাসের জন্য ভোরে সাধারণত যাত্রীদের ভিড় থাকলেও আজ তেমনটা দেখা যায় নি।
রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিকশা চোখে পড়লেও সড়কগুলোকে ব্যক্তিগত যানবাহনও কম দেখা যাচ্ছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অফিসগামী ও শ্রমজীবী মানুষে চলাচল বাড়ে এবং বাস স্টপেজগুলোতে লোকজনের ভিড় দেখা গেছে। একই চিত্র সারাদেশের।
নগরীর মোড়ে মোড়ে এবং গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া অবস্থান রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধে রাজধানীসহ সারা দেশে পুলিশের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার রাত এগারটার দিকে মালিবাগে আনসার ক্যাম্পের পাশে পার্কিং করা একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভায়।
দলের নেতারা আগেই জানিয়েছেন যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে তাদের ‘চূড়ান্ত আন্দোলনের’ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। দলটি অভিযোগ করেছে ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির পর থেকে ১৬৮টির বেশী মামলায় দলের ৮ হাজার ৯৫১ জনের বেশী নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। এছাড়াও বিএনপির বেশ কিছু সিনিয়র নেতাসহ সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক নেতাকে আটক করা হয়েছে নাশকতাসহ নানা অভিযোগে।
ঢাকায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং পুলিশ সদস্য হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সিনিয়র নেতাদের অনেককে আটক করে রিমান্ডে ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মীর্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, আমিনুল হক, শাজাহান ওমর, মুজিবুর রহমান সারোয়ার, বিলকিস জাহান শিরিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।