ইসরায়েল গাজায় খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে: জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

গাজায় ত্রাণ নিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে একদল শিশু। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, ইসরায়েল গাজা এলাকায় খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে এবং এটি প্যালেস্টিনীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। সেখানে মানুষ খাচ্ছে ঘাস, পান করছে দূষিত পানি।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বেসড করে জানায়, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের বোমাবর্ষণ ও অবরোধের ফলে গাজায় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে প্রায় ২.২ মিলিয়ন মানুষের বড় অংশ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা করছে।

“জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস সিএনএনকে বলেছেন, জাতিসংঘের সংস্থাগুলোতে অনাহারে থাকা চার শ হাজার গাজাবাসীর ‘বিশাল অংশ’ দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে।”

ইসরায়েল-হামাসের ১০০ দিনের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার প্যালেস্টিনিয়ানরা গণহারে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এলাকাগুলো ছাই ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যুদ্ধের কারণে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, মারাত্মক রোগের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বোমা হামলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন অনাহার এবং পানি শূন্যতা তাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসাবে দাঁড়াচ্ছে।

গাজায় দুর্ভিক্ষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সিএনএনকে বলছে, তারা ক্ষুধার্ত থাকে, ‘যাতে তাদের শিশুরা যা পাওয়া যায় তা খেতে পারে।’

প্যালেস্টেনিয়ানরা পানি পেলেও তা পানের অযোগ্য। যখন ত্রাণের ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করে, তখন লোকেরা ত্রাণ নেয়ার জন্য একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ইসরায়েলের বোমাবর্ষণে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়ার পর রাস্তায় বসবাসকারী শিশুরা বাসি রুটির জন্য কাঁদছে এবং লড়াই করছে। অন্যরা ইসরায়েলি হামলার ঝুঁকি নিয়ে খাবারের সন্ধানে ঠাণ্ডার মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে বেড়াচ্ছে লোকজন।

‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হুসেইন সিএনএনকে বলেন, ‘যুদ্ধের আগেও গাজার প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল ছিল। ইযরায়েল ও ইজিপ্টের আরোপিত আংশিক অবরোধের মধ্য দিয়ে প্যালেস্টেনিয়ানরা ১৭ বছর ধরে বসবাস করছে।’

রাফাহর এল জামারা নামের এক নারী বলেন, ‘আমরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছি। আমার মনে হয় বোমায় মারা যাওয়াই ভালো, অন্তত আমরা শহীদ হব। কিন্তু এখন আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় মারা যাচ্ছি।’

গাজার উত্তরাঞ্চলের মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ঘাস খাচ্ছে।

রাফায় বাস্তুচ্যুত ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট মোহাম্মদ হামুদার সহকর্মী ওদেহ আল-হাও তার পরিবারের জন্য পানি আনতে গিয়ে নিহত হয়েছেন।

হামুদা বলেন, ‘আল-হাও যখন উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের একটি ওয়াটার স্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন তিনি এবং আরও কয়েক ডজন লোক ইযরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হন।’

তিন সন্তানের বাবা হামুদা সিএনএন-কে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, অনেক আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব এখনও উত্তর গাজায় রয়েছেন, তারা প্রচুর কষ্ট ভোগ করছেন। তারা ঘাস খায় এবং দূষিত পানি পান করে।’