ইসরায়েলি হামলায় জাতিসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিহত ৯

গাজার খান ইউনিসের একটি অংশ থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে । ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক: জাতিসংঘের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি ট্যাংকের হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত হয়েছে এবং ৭৫ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আশ্রয় প্রাপ্ত বাস্তুচ্যুত মানুষেরা। ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা তাদের অভিযানে দক্ষিণ গাজার একটি শহরে হামলা চালাচ্ছে এবং অগ্রসর হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনারা হামলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যকে উল্লেখ করেছে।

প্যালেস্টিনীয় কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন যে, ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা তাদের অভিযানে হাসপাতালগুলোতে হামলা চালাচ্ছে এবং তারা আশ্রয় নিতে আসা মানুষদের পথও বন্ধ করে দিয়েছে।

ইসরায়েলের বাহিনী বর্তমানে দক্ষিণ গাজার এই শহরটিতে তাদের অভিযান পরিচালনা করছে ও অগ্রসর হচ্ছে।

প্যালেস্টেনিয়ান কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা তাদের অভিযানে দক্ষিণ গাজার প্রধান হাসপাতালগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা শহরটির অসংখ্য বাসিন্দার সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ও শহরটিতে আশ্রয় নিতে আসা মানুষদের প্রবেশের প্রধান পথটিও বন্ধ করে দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্যালেস্টেনিয়ানদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, প্যালেস্টেনিয়ানদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত খান ইউনিসে অবস্থিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি থেকে কালো ধোঁয়া উড়ছে।

ইউএনআরডব্লিউএ এর গাজা অ্যাফেয়ার্স এর পরিচালক থমাস হোয়াইট বলেছে, তাদের একটি দলকে ঘটনাস্থলে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়েছে।

এই হামলার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ওই অঞ্চলটি হামাস সদস্যদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। তারা সেখানে হামলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হিসেবে হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যকে উল্লেখ করেছে।

এর আগে এই সংঘাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল যে, প্রক্সি আলোচনায় ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কিছুটা সমঝোতা হয়েছে। প্রস্তাবিত ওই যুদ্ধবিরতির সময়ে উভয় পক্ষই নিজেদের কাছে থাকা জিম্মি ও বন্দিদেরকে মুক্তি দেবে ও গাজায় আরও সহায়তা প্রবেশের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু বুধবারের ঘটনার পর এমন কোনো পরিস্থিতি আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না।

গত এক মাসের মধ্যে তাদের চালানো সবচেয়ে বড় হামলায় ইসরায়েলি ট্যাংকগুলো খান ইউনিসের অনেকটা ভেতরে ঢুকে গেছে যেখানে গাজার উত্তরাঞ্চলে যুদ্ধের কারণে সেখান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা অনেক প্যালেস্টেনিয়ান আশ্রয় নিয়েছিলেন।

খান ইউনিসের উদ্বাস্তুদের আশ্রয় শিবিরের আশেপাশের এলাকাই ইসরায়েলের হামলার মূল লক্ষ্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। নাসের ও আল-আমাল হসপিটাল এবং ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ওই জায়গাতেই অবস্থিত।

ইউএনআরডব্লিউএ এর থমাস হোয়াইট এক এক্সবার্তায় বলেছে, ‘৮০০ মানুষের আশ্রয়স্থল খান ইউনিসের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিকেলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছেন।’

এদিকে খান ইউনিসের বাসিন্দারা ওই অঞ্চলে হামাস সদস্য ও ইসরায়েলি সেনা সদস্যদের মধ্যে তীব্র বন্দুকযুদ্ধের খবর জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা স্নাইপার ও ট্যাংক হামলার মাধ্যমে হামাসের ‘অসংখ্য’ বন্দুকধারীকে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছে।

গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েলি সেনা সদস্যরা তাদের অভিযানের মাধ্যমে হাসপাতালগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে এবং শহরের পশ্চিমের এলাকাগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে।’

ইসরায়েল জানিয়েছে, হামাসের সদস্যরা হাসপাতালগুলোর ভেতর ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে তাদের এই ধরণের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।