খান ইউনিসে হামাস-ইসরাইল প্রচণ্ড যুদ্ধ

টুইট ডেস্ক : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠি- হামাস এবং দখলকার ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে। গাজা উত্তরে হামাসের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে না পেরে ইসরাইলি সেনারা এখন উত্তরাংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সবশেষ খবর পর্যন্ত হামাস-ইসরাইল জোর লড়াইয়ের মধ্যেই খান ইউনিসের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের দখল নিয়েছে আইডিএফ।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এই খবর জানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মঙ্গলবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহর ঘেরাও করে ফেলেছে। এ পদক্ষেপকে হামাস যোদ্ধাদের পরাজিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই একটি এলাকায় তীব্র লড়াই এবং বোমাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে বেসামরিকরা আশ্রয় নিয়েছিলেন।

এলাকাটিকে হামাসের খান ইউনিস ব্রিগেডের একটি ‘উল্লেখযোগ্য দুর্গ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসরাইলি সেনা বাহিনী। গত ২৪ ঘন্টায় কয়েক ডজন হামাস যোদ্ধাকে হত্যার দাবি করেছে তারা। তবে ইসরায়েলি বাহিনীর এ দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি। যুদ্ধে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে ব্যাপক গুলি বিনিময়ও হয়েছে। এ সময় শহরটির হাসপাতালের আশেপাশের এলাকায় ইসরাইলি ট্যাঙ্ক ও সেনাদের ঢল নামে।

সপ্তাহখানেক আগেই দক্ষিণ গাজায় ঢুকতে শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। তখন থেকেই হামাসের সঙ্গে জোর লড়াই চলছে তাদের। গাজার উত্তর প্রান্ত থেকে ভয়ে যেসব মানুষ দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলো, এবার সেই অংশও ইসরাইলি সেনারা ধীরে ধীর দখল করতে থাকায়, আবার এখান থেকেও সব ছেড়ে জীবন হাতে নিয়ে পালাতে হচ্ছে তাদের। গেলো একদিনেই সেখানে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুয়ায়ী, ভূমধ্যসাগর সংলগ্ন আল-মাওয়াসি জেলায় রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে। সেই সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বিপরীতে গাজায় সোমবার নিহত হয়েছে ২৪ জন ইসরাইলি সেনা। এটি হামাসের সাথে যুদ্ধ শুরুর পর এক দিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরাইলি সেনা মৃত্যুর ঘটনা।

খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালকে অবরুদ্ধ করে সব ধরনের পরিষেবা বন্ধ করে দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রেসেন্টের দাবি, শুধু আল-খায়েরিই নয়, খান ইউনিসের আরও একটি হাসপাতাল আল-আমালও নিজেদের দখলে নিয়েছে আইডিএফ। হাসপাতালের সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছেও, রোগিরা আতঙ্কে রয়েছে।

গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সকে বিচ্ছিন্ন করছে, স্টাফ, রোগী এবং বাস্তুচ্যুত লোকদের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলছে। বোমা হামলার কারণে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স থেকে গুরুতর রোগিদের জর্ডানের ফিল্ড হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। কোন কিছু নাড়াচড়া দেখলেই গুলি করা হচ্ছে।

আল জাজিরার এক আরবি সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিস থেকে রাফাহ অভিমুখে রশিদ উপকূলীয় সড়কের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছে, বাস্তুচ্যুত লোকদের চলাচলে বাধা দিচ্ছে। এর আগে, ইসরাইলি ট্যাঙ্কের গোলায় একটি গাড়ি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করলে, রাফাহত থেকে আগত চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়। রাস্তায় বিপজ্জনক পরিস্থিতির পরেও চলমান ইসরাযইলি বোমা হামলার ফলে খান ইউনিস থেকে হাজার হাজার মানুষ রাফাহ ছেড়েছে।

জাতিসংঘ বলছে, গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই লড়াইয়ে গাজার ২৩ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে ৮৫ শতাংশই গৃহহীন হয়ে পড়েছে। চার জনের মধ্যে একজন অভুক্ত অবস্থায় থাকছে। কিন্তু ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী আবারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বাকি জিম্মিদের উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এবং পুরো হামাস বাহিনীকে খতম না করা পর্যন্ত এই লড়াই চলবে। ফলে এখনই যে লড়াই থামাবেন না সেটি নেতানিয়াহুর কথাতেই স্পষ্ট।

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যে গেল ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করা পাল্টা হামলায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হাতে গাজায় এখন পর্যন্ত ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সে সাথে হত হয়েছে আরও ৬৩ হাজার মানুষ।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, ৭ অক্টোবরের ওই হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলে এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত হন। এ সময় প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় প্রতিরোধ যোদ্ধারা। তাদের মধ্যে কয়েক ডজন জিম্মিকে বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় মুক্ত করা হয়। তবে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে এখনও জিম্মি রয়েছেন ১০০ জনেরও বেশি ইসরাইলি।