তাইওয়ানের নির্বাচনে ডিপিপি দলের প্রার্থী লাই চিং জয়ী

তাইওয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী দল ডিপিপি এর প্রার্থী লাই চিং তে। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব ডেস্ক: চায়না সতর্ক করার পরও তাইওয়ানিজ ভোটাররা ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী লাই চিং তেকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। চায়না এই নির্বাচনকে যুদ্ধ কিংবা শান্তির মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নেয়ার সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করে তাইওয়ানিজ ভোটারদেরকে সতর্ক করেছিল।

রয়টার্স জানায়,‘বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট লাই এর দল ডিপিপি তাইওয়ানের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে সমর্থন করে ও বেইজিং এর ঔপনিবেশিক দাবির বিরোধিতা করে। তারা তাইওয়ানের বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় আস্থা রেখে তৃতীয় মেয়াদে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন।’

‘এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লাই এর প্রতিদ্বন্দী ছিলেন তাইওয়ান এর সবচেযে বড় বিরোধী দল কুমিনতাং (কেএমটি) এর প্রার্থী হো ইউ-ই ও তাইওয়ান পিপলস পার্টির প্রার্থী তাইপে এর সাবেক মেয়র কো ওয়েন-জে।’

নির্বাচনে জয়ের পর লাই চিং-তেকে অভিবাদন জানিয়েছেন কুমিনতাংয়ের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হো ইউ-ই।

নির্বাচনে পরাজয়ের পর হো তার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি আমার সমর্থকদেরকে হতাশ করার জন্য দু:খিত। আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।’

তাইওয়ান সেন্ট্রাল ইলেকশন কমিশন শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দল ডিপিপি ৫ মিলিয়নেরও বেশি ভোট পেয়েছে।

প্রধান বিরোধী দল কেএমটি ৩.৯ মিলিয়নের বেশি ভোট পেয়েছে। তাইওয়ান পিপলস পার্টি প্রায় ৩.১ মিলিয়ন ভোট পেয়েছে।

‘তাইওয়ানের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন মেয়াদের সীমাবদ্ধতার কারণে এবার নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারেননি। তার মতো লাইকেও চায়নার কমিউনিস্ট পার্টি সুনজরে দেখে না। তার জয়ের ফলে বেইজিং ও তাইপের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।’

‘তাইওয়ানের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর সাই স্বশাসিত দ্বীপটিতে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়িয়ে দেন। এর ফলে তাইওয়ান প্রণালী বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভূরাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।’

সাই এর মেয়াদে তাইওয়ান আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে। এর পরই আমেরিকা দ্বীপটির প্রতি নিজেদের সমর্থন ও দ্বীপটিতে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।

দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই অভিবাদন জানিয়ে তাকে ফোন কল করেছিলেন উল্লেখ করে সংবাদমাধ্যম-কে লাই বলেন, “আমাদের গণতন্ত্রের নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনার জন্য আমি তাইওয়ানিজ জনগণকে ধন্যবাদ দিতে চাই। আমরা পৃথিবীকে দেখিয়ে দিয়েছি যে আমরা আমাদের দেশের গণতন্ত্রের প্রতি কতোটা শ্রদ্ধাশীল। এটা আমাদের অটুট অঙ্গীকারের প্রতিফলন।”

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়ে দিয়েছি যে গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের মধ্যে আমরা গণতন্ত্রের মধ্যেই থাকব। রিপাবলিক অফ চায়না, তাইওয়ান সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলবে।’

‘লাই এর সহযোগী ও সম্প্রতি অ্যামেরিকায় তাইওয়ানের শীর্ষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সিয়াও বি-খিম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। কখনও শাসন না করলেও চায়নার বর্তমান ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তাইওয়ানকে চায়নার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। একের পর এক চাইনিজ কমিউনিস্ট নেতারা যেকোনোভাবেই চায়নার সঙ্গে তাইওয়ানের ‘পুনরায় একত্রীকরণ’ এর অঙ্গীকার করেছেন। চায়নার প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বারবারই বলেছেন যে, তাইওয়ান ইসুটি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলতে দেয়া উচিত হবে না।’

তাইওয়ানের নির্বাচনের পর আমেরিকান কর্মকর্তারা বলেছেন, যেই শীর্ষ পদে আসুক না কেন, আমেরিকা তাইওয়ানের সঙ্গে তাদের দীর্ঘস্থায়ী নীতি বজায় রাখবে।

শীর্ষ আমেরিকান কর্মকর্তারা জানায়, পূর্বের ধারা বজায় রেখে তাইওয়ানের নির্বাচনের পরপরই সাবেক ও বর্তমান শির্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তাইপেতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাবে আমেরিকা।

ইলিনয় স্টেইট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টি ওয়াই ওয়্যাং বলেন, ‘এই প্রতিনিধি দলের সফর তাইওয়ানকে আমেরিকার সমর্থনের একটি সূক্ষ্ম সংকেত।’

নির্বাচনের শনিবারের ফলাফল চায়না সমর্থিত তাইওয়ানের প্রধান বিরোধী দল কুমিনতাং এর জন্য একটি বড় ধাক্কা। তারা ২০১৬ সালের পর থেকে তাইওয়ানের ক্ষমতায় আসতে পারেনি।

‘নির্বাচনের কয়েকদিন আগে চায়নার তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স অফিস জানিয়েছিল, সাই এর মতোই লাই উসকানি ও সংঘাতের পথ অনুসরণ করছেন এবং তাইওয়ানকে যুদ্ধ ও মন্দার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’