ইতিহাস গড়লেন শেখ হাসিনা

টুইট ডেস্ক : পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন তিনি। এর মধ্যে টানা চতুর্থবার এবং মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তিনি।

ইতোমধ্যে শেখ হাসিনা বিশ্বের দীর্ঘ সময়ের নারী সরকারপ্রধানের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। আরেকবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা শাসকদের কাতারে আরও উপরে উঠলেন তিনি।

১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। এর পর ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোট আবারও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে টানা দ্বিতীয় এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে জিতে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার দল জয়লাভ করায় টানা চতুর্থবার এবং মোট পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন তিনি।

অন্যদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা আটবার জয় পেলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে কাঁধে দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের। নামেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। স্বৈরাচারকে উৎখাত করার আন্দোলনের পাশাপাশি, প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮৬ সালে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে। সেই থেকে প্রতিবারই জয়লাভ করেছেন এই আসনে। অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি।

পাঁচবার প্রধানমন্ত্রী এবং আটবারের মতো সংসদ সদস্য হয়ে ৭৮ বছর বয়সে দেশ পরিচালনা করার রেকর্ড দেশে কারও নেই। শুধু তাই নয়, পৃথিবীতেই এমন নজির বিরল। অন্যদিকে একক ব্যক্তি হিসেবে ৪৩ বছর ধরে একটি দলের নেতৃত্ব দেওয়ার ইতিহাসও কোথাও নেই।

শুধু দেশের রাজনীতি নয়, বিশ্বরাজনীতিরও আলোচিত ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। একাত্তরের প্রেক্ষাপট মনে রেখে, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রশংসিত হন গোটা বিশ্বে। যে দেশকে একদিন বলা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তার দক্ষ নেতৃত্বে সেই দেশ যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।

বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারও সঙ্গেই শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বঙ্গবন্ধু প্রণীত এই পররাষ্ট্রনীতিতে নানামুখী ভূরাজনীতির মেরুকরণেও অনড় রেখেছেন সরকারের অবস্থান। বারবার উঠে এসেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী নারী নেতৃত্বের তালিকায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড়।

শেখ হাসিনা ছাড়াও বিশ্বের আরও অনেক নেতাই তাদের নিজ নিজ দেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আছেন। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলাই ইনস্টিটিটের এক প্রতিবেদন মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় দীর্ঘসময় ধরে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হুন সেন।

গত বছরের মাঝামাঝিতে পদত্যাগ করা ৭০ বছর বয়সী হুন সেন কম্বোডিয়ায় ক্ষমতায় ছিলেন ৩৮ বছর। ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ রয়েছেন সবার ওপরে। তিনি ১৯৬৭ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন। সরকারপ্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে পার্থক্যের কারণে এ ক্ষেত্রে অস্পষ্টতাও তৈরি হয়।

কারণ কেউ কেউ সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান উভয় পদেই দীর্ঘদিন দেশ শাসন করেছেন। আবার কেউ শুধু রাষ্ট্রপ্রধান এবং কেউ শুধু সরকারপ্রধান হিসাবে রেকর্ড গড়েছেন। তবে তাদের সবাই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নন, যেখানে শেখ হাসিনা অনন্য।

বিশ্বের বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১২ সাল থেকে দেশ পরিচালনা করছেন। গত বছর তার শাসন তৃতীয় মেয়াদে গড়ায়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন।

কখনো প্রেসিডেন্ট এবং কখনো প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি ক্ষমতায় আছেন ২০০০ সাল থেকে। চলতি বছরের মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে তিনি আরও ছয় বছর মেয়াদের জন্য জয়ী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।