গাজা–বাংলাদেশ তুলনায় সুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য ঘিরে তীব্র বিতর্ক

গাজার যুদ্ধের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্যে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি।

টুইট ডেস্ক: ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার বিরোধী দলনেতা সুভেন্দু অধিকারীর এক বিতর্কিত মন্তব্যকে ঘিরে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে দেওয়া এই বক্তব্যকে অনেকেই সরাসরি যুদ্ধ ও গণহত্যার উস্কানি হিসেবে দেখছেন।

২৬ ডিসেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যেভাবে ইসরায়েল গাজায় পাঠ শিখিয়েছে, সেভাবে বাংলাদেশকেও পাঠ শেখানো উচিত।”

তিনি আরও বলেন, ভারতের সরকার “১০০ কোটি হিন্দুর স্বার্থে পরিচালিত” এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেভাবে ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, সেভাবেই বাংলাদেশকেও শিক্ষা দেওয়া দরকার।

এই মন্তব্য এমন এক প্রেক্ষাপটে এসেছে, যখন গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে। জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ও একাধিক মানবাধিকার সংস্থা গাজায় হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনির মৃত্যুতে যুদ্ধাপরাধ ও সম্ভাব্য গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। সেই অভিযানের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করাকে কূটনৈতিকভাবে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের পেছনে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর কথিত নিপীড়নের অভিযোগ।

সম্প্রতি ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্র দাস নামে এক যুবকের ঘটনায় ভারতে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিচ্ছিন্ন অপরাধকে ‘সংগঠিত নিপীড়ন’ হিসেবে উপস্থাপন করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

ভারতে সমালোচনার ঝড়

সুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্যের পর ভারতে তীব্র রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) একে ‘নগ্ন ঘৃণা ভাষণ’ এবং ‘গণহত্যার আহ্বান’ বলে আখ্যা দিয়েছে। টিএমসি নেত্রী সাগরিকা ঘোষ বলেন, “বিজেপির বাংলার মুখ গাজার মতো অভিযান চাইছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে—এটি ভয়ংকর ও অগ্রহণযোগ্য।”

সোশ্যাল মিডিয়ায়ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এমন উস্কানিমূলক ও ঘৃণামূলক বক্তব্যের পরও কেন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশ সরকার বারবার বলেছে, দেশটি একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোতে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া তারই প্রমাণ।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিবেশী দেশের একজন প্রভাবশালী নেতার এ ধরনের বক্তব্য দুই দেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বাংলাদেশ শান্তি, সহাবস্থান ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের পক্ষে অবস্থান করে আসছে। গাজার মানবিক বিপর্যয়কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার এবং অন্য একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তুলনা টেনে হুমকিস্বরূপ বক্তব্য দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।

এই ঘটনা নতুন করে দেখিয়ে দিল, ভোট ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে ঘৃণা ও বিভাজনমূলক বক্তব্য কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ জনগণ শান্তি ও স্থিতিশীল সম্পর্ক চায়—যুদ্ধ বা উস্কানি নয়।