আন্দোলনের মুখে রাবির আওয়ামীপন্থী ছয় ডিন অপসারণ

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা আপাতত ডিনদের দায়িত্ব পালন করবেন।

মুরাদুল ইসলাম সনেট: শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলন ও দাবির মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন অনুষদের আওয়ামীপন্থী ছয়জন ডিনকে অপসারণ করা হয়েছে। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন দেন।

অপসারিত ডিনদের রুটিন দায়িত্ব আপাতত উপাচার্য ও তার প্রতিনিধি হিসেবে দুই উপ-উপাচার্য পালন করবেন।

আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে রাবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

অপসারণ হওয়া ছয় ডিন হলেন— আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এস এম কামরুজ্জামান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ, ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ এইচ এম সেলিম রেজা, প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক বিমল কুমার প্রামাণিক এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক নাসিমা আখতার।

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়—এই মর্মে সম্মানিত ছয়জন ডিন লিখিতভাবে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। উপাচার্য মহোদয় তা গ্রহণ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী এরপর ডিনদের দায়িত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভাইস-চ্যান্সেলরের ওপর ন্যস্ত হয়।”

তিনি আরও জানান, দায়িত্ব বণ্টনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের দায়িত্ব সরাসরি উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব নিজে পালন করবেন। উপাচার্যের প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ব্যবসায় শিক্ষা ও আইন অনুষদের দায়িত্বে থাকবেন। আর সামাজিক বিজ্ঞান ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দায়িত্ব পাওয়া এই ছয় ডিনের নির্ধারিত মেয়াদ গত ১৭ ডিসেম্বর শেষ হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং আন্দোলন শুরু হয়।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে ছয় ডিনের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসন ভবনের সব দপ্তরের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে প্রশাসনিক কার্যক্রম কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আলোচনা শুরু হয়। আলোচনায় ডিনদের অপসারণের বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তালা খুলে দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ডিনদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসে। ওই বৈঠকে সব ডিন পৃথকভাবে লিখিত আবেদন দিয়ে রুটিন দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানান।

এর আগে সোমবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার ছয় ডিনের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন। তিনি রাকসু ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে একে একে ছয় ডিনকে ফোন করেন। তবে কেউ ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না।

এ সময় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ক্লাস নিচ্ছেন—এমন তথ্য পেয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার তার বিভাগে যান। তবে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে দুপুরে শিক্ষার্থীরা ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের তিনজন ডিনের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দীর্ঘ কয়েকদিনের অচলাবস্থা আপাতত নিরসন হলেও ভবিষ্যতে ডিন নিয়োগ ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।