রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলনে কন্যা হ’ত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঘা: রাজশাহীর বাঘায় সংবাদ সম্মেলন করে কন্যা হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন নিহত মনিষার বাবা মুনসাদ আলী। বুধবার (১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে বাঘা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে মুনসাদ আলী অভিযোগ করেন, বিয়ের পূর্ণ বয়স হওয়ার আগেই তার মেয়ে মোসা. মনিষাকে রেজিস্ট্রি কাবিন ছাড়াই বিয়ে করেন বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের মৃত আবু জিহাত আলীর ছেলে আজাদ আলী (২৫)। তখন মনিষার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। এ সময় বিয়ের খরচ মেটাতে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনি দুই লাখ টাকা দেন।

বিয়ের চার বছর পর মেয়ের পূর্ণ বয়স হলে কাবিননামা রেজিস্ট্রির কথা বললে আজাদ আলীর মামা শহিদুল ইসলাম ও আত্মীয় জুয়েল আলী যৌতুক হিসেবে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মনিষার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এক পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মনিষার মৃত্যু হয়। তবে স্বামী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে মুনসাদ আলী বলেন, “আমি ঢাকায় উল্কা গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। অতিরিক্ত টাকা দিতে না পারায় আমার মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হতো। এমনকি আমাদের সঙ্গে তার সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

তিনি জানান, গত ২০ অক্টোবর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তার মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যায়। রাত আড়াইটার দিকে গ্রামের এক ব্যক্তি তার স্ত্রী রুবিনাকে জানায়, মনিষা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে মারা গেছে। পরে স্বজনরা শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে ঘরের মেঝেতে চাদর মোড়ানো মরদেহ দেখতে পান, তবে আত্মহত্যার কোনো আলামত পাননি।

খোঁজ নিয়ে তিনি নিশ্চিত হন, এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে পাঠায়। ঘটনার পর থেকেই স্বামী আজাদ আলী ও তার মা শরিফা পলাতক রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, অন্য এক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়েও মনিষার সংসারে অশান্তি ছিল। হত্যার পর আত্মহত্যা প্রমাণে একটি লিখিত কাগজ দেখানো হলেও সেটির হাতের লেখা মনিষার লেখার সঙ্গে মিলেনি, যা ঘটনাকে আরও সন্দেহজনক করে তোলে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মনিষার মা রুবিনা ও মামা সাদ্দাম হোসেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মহিদুল ইসলাম জানান, মুনসাদ আলীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনা’র অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আজাদ আলী ও তার মা শরিফাকে আসামি করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।