থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষে নিহত ৩৬ জন

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত: নিহত থাইল্যান্ডের ১৯ সেনা, কম্বোডিয়ার ১৭ বেসামরিক নাগরিক
বিশ্ব ডেস্ক: থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার সীমান্ত সংঘর্ষ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাত ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। দুই দেশের দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ, বিশেষ করে প্রাচীন প্রেহ বিহার (Preah Vihear) মন্দির ও আশপাশের বিতর্কিত এলাকা—প্রসাত তা কোয়াই ও হিল ৩৫০—কেন্দ্র করেই মূলত এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চলমান সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনীর অন্তত ১৯ জন সেনা নিহত হয়েছেন।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার পক্ষে ১৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে এক শিশুও রয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ৭৭ জন।
থাইল্যান্ড দাবি করেছে, সংঘর্ষে তাদের হামলায় ২০০-এর বেশি কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হয়েছে, যদিও এ দাবির বিষয়ে কম্বোডিয়া সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি।
থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস শতাব্দী প্রাচীন। ১১শ শতাব্দীতে নির্মিত প্রেহ বিহার মন্দিরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে এই বিরোধ নতুন করে সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়। ওই সময় কম্বোডিয়ার রকেট হামলার জবাবে থাইল্যান্ড বিমান হামলা চালায়।
ডিসেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। থাইল্যান্ডের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী সামরিক অবস্থানে একাধিকবার বোমাবর্ষণ করে। এর আগে মালয়েশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও তা টেকেনি। গত ৭ ডিসেম্বর সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে থাই সেনা নিহত হওয়ার পর যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। পরদিন কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণের জবাবে থাইল্যান্ড আবারও বিমান হামলা চালায়।
সংঘর্ষে হতাহতের পাশাপাশি ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত এসব মানুষের মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। খাদ্য, চিকিৎসা ও আশ্রয়ের তীব্র সংকটে পড়েছে সীমান্ত এলাকার জনগণ।
থাইল্যান্ড দাবি করেছে, তারা প্রসাত তা কোয়াই ধর্মীয় স্থানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়া বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং থাই হামলাকে ‘অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’ বলে আখ্যা দিয়েছে।
সংঘর্ষ থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। আসিয়ান (ASEAN)-এর একটি বিশেষ বৈঠকও স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সীমান্তের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার জন্য তাদের নাগরিকদের সতর্ক করেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংঘর্ষ দীর্ঘায়িত হলে শুধু থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়াই নয়, পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। পরিস্থিতি এখনো অত্যন্ত উত্তপ্ত এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।






