ক্রীড়ায় নারী জাগরণের স্বীকৃতি পেলেন ঋতুপর্ণা

বেগম রোকেয়া পদক ২০২৫ পেলেন বান্দরবনের নারী ফুটবলের আইকন ঋতুপর্ণা চাকমা!

অসীম রায়( অশ্বিনী): বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উজ্জ্বল মুখ ঋতুপর্ণা চাকমা অর্জন করলেন দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বেগম রোকেয়া পদক ২০২৫। ক্রীড়া ক্ষেত্রে নারী জাগরণে অসামান্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক পান তিনি।

রাঙামাটির পাহাড়ি অঞ্চল থেকে উঠে আসা ঋতুপর্ণা দেশের ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে এ পদক অর্জন করলেন, যা নারী ফুটবলের জন্য একটি মাইলফলক।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঋতুপর্ণার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, জাতীয় সংগীত পরিবেশন এবং সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে দিনটি হয়ে ওঠে বিশেষ।

এ বছর মোট চার নারীকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়েছে। ক্রীড়ায় নারী জাগরণে ঋতুপর্ণা চাকমা ছাড়াও নারীশিক্ষা (গবেষণা) ক্ষেত্রে পুরস্কৃত হয়েছেন রুভানা রাকিব, শ্রমিক অধিকার আন্দোলনে অবদানের জন্য পদক পেয়েছেন কল্পনা আক্তার এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতি পেয়েছেন নাবিলা ইদ্রিস।

ঋতুপর্ণার ফুটবল ক্যারিয়ার নানা গৌরবমুখর সাফল্যে ভরপুর। ২০২৪ সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল করে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন করেন তিনি। এছাড়া ২০২৫ এএফসি উইমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে মিয়ানমারের বিপক্ষে তার জোড়া গোলই বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো মূল পর্বে খেলার সুযোগ এনে দেয়। পাহাড়ি অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হওয়া তারুণ্যের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।

বাফুফে ঋতুপর্ণাকে অভিনন্দন জানিয়ে জানায়, নারী ফুটবলে তার অবদান বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য গর্বের বিষয়। তারা আরও বলে, স্বপ্ন থেকে সংগ্রাম এবং সংগ্রাম থেকে সাফল্যের এই যাত্রায় বাফুফে তার পাশে থাকবে।

পদক গ্রহণের পর ঋতুপর্ণা বলেন, এই সম্মাননা শুধু তার একার নয়, বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি মেয়ের। তিনি বলেন, ছোটবেলায় ফুটবল খেলা স্বপ্ন মনে হতো, আজকের অর্জন প্রমাণ করছে—পরিশ্রম, ধৈর্য এবং বিশ্বাস থাকলে অসম্ভবকেও জয় করা যায়।

১৯৯৫ সাল থেকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই পদক প্রদান করে আসছে। পদকের সঙ্গে ৫ লাখ টাকা, স্বর্ণপদক এবং সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। অতীতে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সালমা খাতুন ও আরমিন আশা এই পদকে ভূষিত হয়েছিলেন।

ঋতুপর্ণা চাকমার এই অর্জন বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াঙ্গনের নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিল। পাহাড় থেকে জাতীয় পর্যায়ে তার সাফল্য এখন দেশের হাজারো মেয়ের স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।