নতুন ঘোষিত ৩৬ আসনে ২৭ প্রার্থী বদল বিএনপির

টুইট ডেস্ক: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
প্রার্থিতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন ঘোষিত ৩৬ আসনের প্রার্থীদের মধ্যে ২৭টিতে ধানের শীষের প্রার্থিতায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাকি ৯টিতে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের ওপরই আস্থা রেখেছে বিএনপি। এর মধ্যে নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু, খুলনা-১ আসনে আমির এজাজ খান, বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন, ময়মনসিংহ-৪ আসনে মো. আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবির, সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে রেজা কিবরিয়া এবং চট্টগ্রাম-৩ আসনে মোস্তফা কামাল পাশা আবারও ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন। তিনশ আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৮টি আসন ফাঁকা রেখেছে বিএনপি। তবে এসব আসনের মধ্যে কতগুলো মিত্রদের জন্য এবং কতগুলোতে নিজেদের প্রার্থী দেওয়া হবে, সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। এদিকে নতুন ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে একজন নারীকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী নাদিরা আক্তার মাদারীপুর-১ আসন থেকে লড়বেন। এই নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ১১ জন নারীকে প্রার্থী করল দলটি।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে দলের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছিল। সেখানে মাদারীপুর-১ আসনে মনোনয়ন পান কামাল জামান মোল্লা। অবশ্য এক দিন পর মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থীর নাম স্থগিত করা হয়েছিল। এই আসনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন নাদিরা আক্তার, যিনি শিবচর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলার পরিচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মরহুম মিঠু চৌধুরীর স্ত্রী।
নতুন ঘোষিত আসনগুলোর মধ্যে কমপক্ষে চারটি আসনে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্ররা ধানের শীষের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের আহ্বায়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং যশোর-৫ আসনে ১২ দলীয় জোট শরিক জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব রশিদ বিন ওয়াক্কাস। তাদের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ থেকে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং পিরোজপুর-২ থেকে মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করেন। আর যশোর-৫ থেকে নির্বাচন করেন রশিদ বিন ওয়াক্কাসের পিতা জমিয়তের মরহুম মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস। নির্বাচন সামনে রেখে অনিবন্ধিত তিন দলের চেয়ারম্যানরা এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগে থাকলেও তাদের কেউই এবার মনোনয়ন পাননি। নড়াইল-২ থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ থেকে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল, ঝালকাঠি-১ থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল এবং যশোর-৫ থেকে মনিরামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেনকে প্রার্থী করেছে দলটি। একাদশে মাদারীপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন মিল্টন বৈদ্য। তবে এবার এই আসনে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাহান্দার আলী খানকে প্রার্থী করেছে বিএনপি।
৩০০ আসনের মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপ মিলিয়ে এ পর্যন্ত মোট ২৭২ আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাদ বাকি ২৮ আসনের তালিকা ‘যথাসময়ে’ ঘোষণা করবে দলটি। এ তথ্য জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যারা আছেন, তাদেরগুলো এবং আমাদের দু-একটা ডিসিশন হবে, সেগুলো আমরা আরও পরে ঘোষণা করব। বাকিগুলো আমরা যথাসময়ে ঘোষণা করব।
‘আলোচিত’ ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী শেখ রবি: ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ থানা নিয়ে গঠিত ‘আলোচিত’ ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম রবিকে প্রার্থী করেছে বিএনপি। ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত এই আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন রবি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন দলটির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনে শেখ রবিউল আলম বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছিলেন।
গত ৯ নভেম্বর ঢাকা-১০ আসনে ভোটার হওয়ার আবেদন করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এর আগে মুরাদনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-৩ আসনের ভোটার ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক। এই আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরুতে এমন আলোচনা চলছিল। পরে গুঞ্জন ওঠে, বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করে ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করতে পারেন আসিফ মাহমুদ। বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থিতা ঘোষণা করলে তাতে ঢাকা-১০ আসন ফাঁকা রাখা হয়। এতে আসিফকে ঘিরে গুঞ্জন আরও পাকাপোক্ত হয়।
পূর্ণ হলো না স্নিগ্ধর ‘আশা’, ঢাকা-১৮তে প্রার্থী জাহাঙ্গীর: ঢাকা-১৮ আসনে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রার্থী করেছে বিএনপি, যিনি হামলা-মামলা-নির্যাতন সত্ত্বেও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন। যদিও রাজনীতিতে গুঞ্জন ও আলোচনা ছিল, এই আসন থেকে জুলাই শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধকে প্রার্থী করতে পারে দলটি। এর অংশ হিসেবে গত ৪ নভেম্বর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন স্নিগ্ধ। গত ৩ নভেম্বর এই আসনটিসহ ৬৩টি আসন ফাঁকা রেখেছিল বিএনপি।
স্নিগ্ধ বিএনপিতে যোগ দেওয়ার চার দিন পর উত্তরার নির্বাচনী আসনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, যদি কখনো সুযোগ হয়, তাহলে আমি উত্তরাকেন্দ্রিক যে আসনটি রয়েছে, সেখানে কাজ করার জন্য চাইব।
ঘোষিত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা-৭ আসনে হামিদুর রহমান হামিদ এবং ঢাকা-৯ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন হাবিবুর রশিদ হাবিব। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনটি গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে ছেড়েছিল বিএনপি। আর ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসকে প্রার্থী করেছিল দলটি। এখনো রাজধানীতে তিনটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষিত হয়নি। সেগুলো হলো ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৭ ও ঢাকা-২০।
বিএনপিতে যোগ দিয়েই মনোনয়ন পেলেন রেজা কিবরিয়া: বিএনপিতে যোগদান করেই হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে দলের মনোনয়ন পেয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন রেজা কিবরিয়া। রেজা কিবরিয়া ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে একই আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পরে তিনি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ ও আমজনতার দলের আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
প্রার্থী বদল করা ২৭ আসন হলো: ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুস সালাম, দিনাজপুর-৫ আসনে একেএম কামরুজ্জামান, নাটোর-৩ আসনে মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজা, যশোর-৫ আসনে অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মো. মনিরুল ইসলাম, পটুয়াখালী-২ আসনে মো. শহিদুল আলম তালুকদার, ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মো. মাজহারুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা-৭ আসনে হামিদুর রহমান (হামিদ), ঢাকা-৯ আসনে হাবিবুর রশিদ (হাবিব), ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম (রবি), ঢাকা-১৮ আসনে এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, গাজীপুর-১ আসনে মো. মজিবুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ফরিদপুর-১ আসনে খন্দকার নাসির উল ইসলাম, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম, সিলেট-৪ আসনে আরিফুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা-২ আসনে মো. সেলিম ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমীন এবং কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ে দলের সামগ্রিক লাভ-ক্ষতি হিসাবনিকাশ করা হয়। সেই হিসাবনিকাশ শেষে উপযুক্ত প্রার্থীকেই দল বেছে নেয়। ভোট তো এক রকম উৎসবের মতো। ভোটের আগে নানান গুঞ্জন উঠবে, সেটা নিয়ে নানা পক্ষের নানা মত-দ্বিমত থাকবে।






