রাজশাহীতে ধরা ছোঁয়ার বাইরে মাদক সম্রাট কাউন্সিলরসহ ৪ ভাই

নিজস্ব প্রতিবেদক : ধরা ছোঁয়ার বাইরে গোদাগাড়ীর মাদক সম্রাট কাউন্সিলরসহ ৪ ভাই। তারা হলেন গোদাগাড়ী উপজেলার মাদারপুর গ্রামের মজিবর রহমানের ৪ ছেলে মনিরুল ইসলাম মুনির, মেহেদী হাসান, আব্দুর রহিম টিপু, সোহেল রানা।
এদের মধ্যে মনিরুলের বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে ৪টি, মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধ মাদক মামলা রয়েছে ৪টি, আব্দুর রহিম টিপুর বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে ৫টি ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদক মামলা রয়েছে ৫ টি। সব গুলি হেরোইন এর মামলা।
জানা গেছে, মনিরুল চারটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন, মেহেদী হাসান চারটি মামলার মধ্যে একটি মামলায় পলাতল রয়েছেন, সোহেল রানা পাঁচটি মামলার ভেতরে একটি মামলায় পলাতক রয়েছেন, আব্দুর রহিম টিপু পাঁচটি মামলার মধ্যে দুইটি মামলায় পলাতক রয়েছেন।অথচ তারা বছরের পর বছর ধরে রীতিমতো অদৃশ্য শক্তির মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এখনও। এদের একজন বর্তমানে গোদাগাড়ী পৌরসভার কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এই চার শীর্ষ মাদক সম্রাট।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, মনিরুল ইসলাম ও তাঁর তিন ভাই—আবদুর রহিম টিপু, মেহেদী হাসান এবং সোহেল রানা দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত মাদক সিন্ডিকেটে। কোটি কোটি টাকার হেরোইন ব্যবসা করে বিপুল সম্পদের মালিক তারা।
মনিরুল ইসলাম নিজেও ২০১৩ সালে প্রায় ৪ কেজি হেরোইনসহ চারঘাট থানা পুলিশের হাতে আটক হন। ২০১৭ সালে পুঠিয়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে আরও একটি মাদক মামলা হয়। এরপরও তিনি ক্ষমতার ছত্রছায়া পেরিয়ে ২০২১ সালে পৌর কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। মনিরুলের ভাই টিপু এতটাই বড় মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত যে ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত রাজশাহীর শীর্ষ ১৫ মাদক কারবারির একজন হিসেবে তাঁর নাম প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি (৭ মে) ৪ কেজি ৩০০ গ্রাম হেরোইনসহ নতুন একটি মামলায় টিপুর নাম আসে। মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক। সোহেল রানা ও মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও রয়েছে ২০১২ সালে দায়ের করা মাদক মামলা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাউন্সিলর মনিরুল ইসলাম গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি অতীতে “হেরোইন বহনের কাজ” করতেন। তবে তাঁর দাবি “অভিযোগের বেশিরভাগই রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে।” কিন্তু একাধিক মামলার তথ্য ও পুলিশের নিশ্চিতকরণ তাঁর বক্তব্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
গোদাগাড়ীর সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রমরমে হেরোইন ব্যবসা করে গত ১৭ বছরে অভাব থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে তারা।
এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, দশ বছর আগেও এই পরিবারটি ছিল স্বল্প-সম্পদের। কিন্তু এখন তাদের সম্পত্তির পরিমাণ বিস্ময়করভাবে বেড়েছে—যা কোনো বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।
পরিবারটির বর্তমান সম্পদের আংশিক চিত্র :-রাজশাহী শহরে আলীগঞ্জ ২৮ কোটি টাকার চারতলা বাড়ি ও মার্কেট, নিউমার্কেটে ৩টি দোকান (তোমা কালেকশন, তমা ফ্যাশন, তমা সুজ), সাহেববাজারে আরডিএ মার্কেটে একাধিক দোকান, গোদাগাড়ীর হাবাসপুরে খামার, মাদারপুরে তিনটি বাড়ি—একটি ডুপ্লেক্স, মহিষালবাড়ী বাজারে চারটি দোকান, বরেন্দ্র এলাকায় ৬৬ বিঘা কৃষিজমি ও চরে ২১ বিঘা জমি, দুটি মাইক্রোবাস, একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, একটি ট্রাক।
গোদাগাড়ী উপজেলার মাদারপুর গ্রামের আমিন বেপারির ছেলে ফয়েজুর রহমান মনির, মেহেদী, টিপু ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য দিয়ে দূর্নিতি দমন কমিশন দুদুকের পরিচালক, এনএসআই এর মহাপরিচালক, র্যবের মহাপরিচালক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রমাণ সহকারে একাধিক লিখিত অভিযোগ করলেও আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ ফয়েজুর রহমানের।
স্থানীয়দের মতে, এই পরিবারটির অর্থবিত্ত, রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের ফলে এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না। অভিযোগকারীরাই উল্টো হয়রানির শিকার হন। সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্ত পরিবার, ভুক্তভোগী যুবসমাজ ও সচেতন মহল দাবি তুলেছে “রাজশাহীর এই সিন্ডিকেটকে ভেঙে না দিলে পুরো অঞ্চলে মাদক নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।”
এ বিষয় রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, তারা চার ভাই পুলিশের তালিকা ভুক্ত মাদক সম্রাট। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। আশা করি দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।






