এবার পদ্মাপাড়ে ভরাডুবির শঙ্কায় নৌকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহী দুই সদর আসনে ভরাডুবির সংঙ্কায় পড়েছে নৌকা। এই আসনে নৌকার প্রার্থী এবং ওওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা গত তিনবার নৌকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ তার দলের নেতা-কর্মীদের ১০ হাজার ভোটও এই শহরে নেই। তারপরেও কেবলমাত্র নৌকা পাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কারণে তিনি তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিন্ন ছিল। কিন্তু নির্বাচনের সময় চলে এলে তিনি আবার আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের হাতে পায়ে ধরে তাদের কাজে লাগান। একই অবস্থা ঘটে ২০১৪ সালের নির্বাচনেও। এভাবে ২০০৮ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ফজলে হোসেন বাদশা আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের সহযোগিতায় নিজ দলের অবস্থান না থাকলেও টানা তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভুলে গেছেন। এমনকি রাজশাহী মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার ব্যক্তিগত এবং পারিবারিকভাবে ক্ষতি করারও চেষ্টা করেন এমপি বাদশা। এই নিয়ে এবার প্রকাশ্যে মতবিরোধ দেখা দেয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে এমপি বাদশার।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ফজলে হোসেন বাদশার কয়েকজন কর্মীর হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে টানতে না পারার ব্যর্থতার কারণে এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, তাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি করা এবং হাতে গোনা কয়েকজন লোককে নিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাটসহ নানা অপকর্মের কারণে এবার তার পক্ষে কেউ কাজ করতে রাজি হননি। ফলে এবার অন্তত তিন বছর আগে থেকেই ফজলে হোসেন বাদশা সরাও নীতিতে অটল ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। আগামীকাল সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হবে। কিন্তু নানা কৌশল করেও এখন পর্যন্ত সেই নীতি থেকে সরানো যায়নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। অপরুন্ত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুর রহমান বাদশাকে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামেন।

নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক মোস্তাক হোসেন বলেন, শফিকুর রহমানকে জয়ী করতে তারা শুরু থেকেই ব্যাপক তাৎপরতা শুরু করেন নগরীতে। নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা প্রচারণা চালাতে থাকেন শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষে। ফলে তার জয় পাওয়া এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

অপরদিকে, ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে দশটি ওয়ার্ডেও ঢুকতে পারেননি ফজলে হোসেন বাদশার লোকজন। এমনকি গত ১৫ বছর এমপি থাকলেও ফজলে হোসেন বাদশা ১৫টি ওয়ার্ডেও যাননি কখনো। এরপরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যে তীব্র বিরোধ তৈরি করেন ফজলে হোসেন বাদশা, সেটির কারণে শুরু থেকেই ক্ষুব্ধ রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। ফলে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে যেন অন্তিম শয্যায় পরিণত হয়েছে বাদশার দশা। এখন শুধু কাল ভোটের দিন তার নির্বাচনী কফিনে শেষ পেরেক ঢুকানো বাকি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেন, সরকার নিরপেক্ষভাবে ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করায় আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে এবার সহযোগিতা না করায় ভোটকেন্দ্রে থাকার জন্য তার পক্ষে পোলিং এ্যাজেন্টও পাবেন না তিনি। আর সে কারণে তিনি এখন মরিয়া হয়ে নানা অপকৌশল শুরু করেছেন। অথচ সুষ্ঠু ভোট হলে এই নগরীর দশ হাজার মানুষও তাকে ভোট দিবেন না। সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ বাসিন্দার এই শহরের আবারো এমপি হওয়ার জন্য নানা অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

তবে তার সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে সাধারণ নগরবাসী আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশাকে ব্যাপক ভোটে বিজয়ী করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওই নেতা। আগামীকাল রবিবার ভোটে আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান বাদশার পক্ষ গণজোয়ার তৈরি হবে বলেও দাবি করেন তিনি।