পঞ্চম পার্বত্য লেখক সম্মেলন: তরুণদের হাতে নেতৃত্ব

পঞ্চম পার্বত্য চট্টগ্রাম লেখক সম্মেলন ও সম্মাননা প্রদান ২০২৫: সাহিত্যচর্চায় নতুন আলোর সঞ্চারভ

নিজস্ব প্রতি‌নি‌ধি: “আমার ভাষায় আমার সাহিত্য” প্রতিপাদ্যকে কেন্দ্র করে চিটাগং হিল ট্রাক্টস রাইটার্স ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী “পঞ্চম পার্বত্য চট্টগ্রাম লেখক সম্মেলন ও সম্মাননা প্রদান ২০২৫”

আজ বৃহঃবার (২০ নভেম্বর) রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সফলভাবে সমাপ্ত হয়েছে।

এই সম্মেলন পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ভাষা-সাহিত্যের প্রসার ও সংরক্ষণে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা তরুণ প্রজন্মের লেখকদের উদ্দীপ্ত করার পাশাপাশি অভিজ্ঞ সাহিত্যিকদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।

উদ্বোধন ও সম্মাননা প্রদান: সাহিত্যের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদন

সম্মেলনের প্রথম দিন (১৮ নভেম্বর) রাঙ্গামাটি জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কবি ও নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমাদের ভাষা ও সাহিত্য আমাদের পরিচয়ের মূল স্তম্ভ। এই সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা শুধু লেখকদের সম্মান করছি না, বরং পার্বত্য চট্টগ্রামের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করছি।”

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, যিনি সম্মেলনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “সাহিত্যের মাধ্যমে আমরা আমাদের অধিকার ও পরিচয়কে শক্তিশালী করতে পারি।”

এদিনের অন্যতম হাইলাইট ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান। এই সম্মাননাগুলো সাহিত্যচর্চায় তাদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রদান করা হয়েছে। যদিও নির্দিষ্ট নামগুলো এখনও অফিসিয়ালভাবে প্রকাশিত হয়নি, তবে এই সম্মানিত ব্যক্তিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক জগতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এই সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে সম্মেলন স্থানীয় লেখকদের উৎসাহিত করেছে এবং আদিবাসী ভাষা-সাহিত্যের প্রসারে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

দ্বিতীয় দিন: সেমিনার ও নির্বাচন – তরুণ প্রজন্মের উত্থান
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন (১৯ নভেম্বর) “পার্বত্য চট্টগ্রামে সাহিত্য প্রসারে তরুণ লেখকদের ভূমিকা” শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে পার্বত্য চট্টগ্রামের বহু গুণী লেখক ও ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন। অভিজ্ঞ লেখকরা তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে নিজেদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ প্রদান করেন, যেমন সাহিত্য রচনায় স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির একীভূতকরণ, প্রকাশনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সাহিত্যের প্রচার।

তরুণ লেখকরাও আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন, যা সম্মেলনকে আরও গতিশীল করে তোলে।

সেমিনারের পর চিটাগং হিল ট্রাক্টস রাইটার্স ইউনিয়নের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে মংক্য শৈনু মারমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নতুন কমিটি শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

বিশেষ করে, নতুনভাবে সাতজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে পাঁচজন তরুণ প্রজন্মের কবি ও লেখক। এই নির্বাচন তরুণদের নেতৃত্বে সাহিত্যচর্চার নতুন যুগের সূচনা করেছে।

সম্মেলনে ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা

এই সম্মেলন পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সাহিত্যিক জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছে। বাংলা একাডেমির মতো জাতীয় প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা এবং স্থানীয় লেখকদের অংশগ্রহণ এটিকে আরও প্রামাণ্যতা দিয়েছে। চিটাগং হিল ট্রাক্টস রাইটার্স ইউনিয়নের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে আরও বেশি সেমিনার, কর্মশালা এবং প্রকাশনা কর্মসূচির পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

টুইটনিউজ২৪.কম পক্ষ থেকে অভিনন্দন

চিটাগং হিল ট্রাক্টস রাইটার্স ইউনিয়নকে এই সফল সম্মেলনের জন্য অভিনন্দন জানাই। বিশেষ করে, তরুণ প্রজন্মের এই পাঁচজন নতুন সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আশা করি, তাদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে সাহিত্যচর্চা আরও সমৃদ্ধ হবে এবং আদিবাসী ভাষা-সাহিত্য বিশ্বমঞ্চে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। টুইটনিউজ২৪.কম সর্বদা এমন সাংস্কৃতিক উদ্যোগের পাশে থাকবে।