বিএনপি মনোনয়ন সংকট: সময় খুব কম – কিন্তু এখনো দেরি হয়নি

বিএনপির মনোনয়ন ঘোষণার পর ৫০টির বেশি আসনে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ।

বদিউল আলম লিংকন: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি ২৩৭টি আসনে তাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। তবে ৫০টির বেশি আসনে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ চলছে।

৩ নভেম্বর ঘোষিত তালিকায় নতুন, ‘হাইব্রিড’ ও আন্দোলনে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের স্থান দেওয়ায় বিভিন্ন আসনে ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতারা বাদ পড়েছেন। এছাড়া প্রবাসে থাকা বেশ কয়েকজনকেও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ফলে একাধিক আসনে ভাঙচুর, মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ ও সমাবেশের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন বঞ্চিত নেতা-কর্মীরা।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে বাদ দিয়ে কাজী সালাউদ্দিনকে মনোনয়ন দেওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন সমর্থকরা। আসলাম চৌধুরী ইতিমধ্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন পুতুলকে মনোনয়ন দেওয়ায় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বঞ্চিত হয়েছেন।

মৌলভীবাজার-২ আসনে শওকতুল ইসলাম শকুর মনোনয়নে অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার সমর্থকরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও পথসভার মাধ্যমে বিক্ষোভ দেখান।

মাদারীপুর-১ আসনে জামান কামাল নুরুউদ্দিন মোল্লার মনোনয়নে সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলুর কর্মীরা শিবচরে সড়ক অবরোধ করেন।

সাতক্ষীরা-৩ আসনে কাজী আলাউদ্দিনের মনোনয়নে ডা. শহিদুল আলমের সমর্থকরা টানা বিক্ষোভ করেন।
বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় অর্ধশতাধিক আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি, অবস্থান, অনশন ও শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। যেসব আসনে

মনোনয়নবঞ্চিতরা বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছে-

ঢাকা বিভাগ: মানিকগঞ্জ-০১, ঢাকা-১২, মাদারীপুর-০১ ও ০২, মুন্সিগঞ্জ-০১, গাজীপুর-০৬ এবং গোপালগঞ্জ-০২ আসনের মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষ ও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এসব এলাকায় বিক্ষোভ, দলীয় কার্যালয় ঘেরাও এবং মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রাম-০২, ০৪ ও ১৬, কুমিল্লা-০৫, ০৬, ০৯ ও ১০, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-০৫, নোয়াখালী-০২ ও ০৫, ফেনী-০২ এবং চাঁদপুর-০৪ আসনে মনোনয়নবঞ্চিতদের কর্মসূচি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে। কোথাও সড়ক অবরোধ, কোথাও বিক্ষোভ মিছিল, কিছু এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও হয়।

সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগ: সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার-০২, রংপুরের দিনাজপুর-০২ ও কুড়িগ্রাম-০৩ এবং ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ-০৩, ০৬, ০৯ ও শেরপুর-০১ ও ০২ আসনেও বঞ্চিত নেতাদের সমর্থকেরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

খুলনা বিভাগ: খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া-০২, ০৩ ও ০৪, সাতক্ষীরা-০২, ০৩, ঝিনাইদহ-০৩, মেহেরপুর-০১ ও ০২ এবং মাগুরা-০২ আসনে দলীয় নেতাকর্মীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। জেলা কার্যালয়ের সামনে ধরনা ও মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

রাজশাহী বিভাগ: রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী-০১, ও ০৩, নওগাঁ-০১, ০৩ ও ০৪, জয়পুরহাট-০২, নাটোর-০১, পাবনা-০৪ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-০২ আসনেও একইভাবে দলীয় অসন্তোষ দেখা গেছে। নেতাকর্মীরা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।

৫০টির বেশি আসনে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, দলীয় কার্যালয় ঘেরাও — এটা বিএনপির ইতিহাসে মনোনয়ন-পরবর্তী সবচেয়ে বড় অসন্তোষ।

কীভাবে করবেন যাতে নতুন সংকট না হয়?

এই ১০-১২ জনকে ডেকে এনে সম্মানের সঙ্গে মনোনয়ন দিন।

যাদের বাদ দেবেন তাদেরকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে বা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ দিন।

তারেক রহমান বা মির্জা ফখরুল একটা ছোট ভিডিও বার্তায় বলুন: “তৃণমূলের কথা শুনে আমরা কয়েকটি আসনে সংশোধন করছি—এটা দলের ঐক্যের জন্য।”

বাকি আসনে যারা বিক্ষোভ করছে তাদেরকে স্থানীয়ভাবে মানিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব জেলা সভাপতিদের দিন।

ফলাফল কী হবে?

এই ১০-১২টা সংশোধন করলেই ৮০% অসন্তোষ কমে যাবে। বাকি অসন্তোষ সামাল দেওয়া যাবে। আর যদি একটাও না করেন তাহলেও এই ১০-১৫টা আসনেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হবে।

বিএনপির সামনে এই নির্বাচন ১৯৯১ সালের মতো “ঐতিহাসিক সুযোগ”। কিন্তু মনোনয়ন-সংকটের কারণে এই সুযোগ নিজেরাই নষ্ট করার ঝুঁকি তৈরি করেছে । যদি দ্রুত, সাহসী এবং স্বচ্ছ সংশোধন করা হয়, তবু ১৫০+ আসনে জয় সম্ভব। না হলে ৫০-৬০ আসনেও আটকে যেতে পারে।

সিদ্ধান্ত এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে। সময় খুব কম – কিন্তু এখনো দেরি হয়নি।