খাতা গাফিলতি: ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৫৫ জন!

খাতা মূল্যায়নে চরম গাফিলতি: এইচএসসি পুনর্নিরীক্ষণে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেলেন যশোর বোর্ডের এক শিক্ষার্থী, সারা দেশে নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৫৫ জন।

টুইট প্রতিবেদক: পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ব্যবস্থায় চরম দায়িত্বহীনতা ও গাফিলতির চিত্র ফুটে উঠেছে এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফলে। যশোর শিক্ষা বোর্ডের এক শিক্ষার্থী প্রথমে ফেল দেখিয়ে পরে পুনর্নিরীক্ষণে সরাসরি জিপিএ-৫ পেয়েছেন।

সারা দেশে ফেল থেকে পাশ করেছেন ১ হাজার ৪৭৯ জন এবং নতুন করে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন ৫৫৫ জন শিক্ষার্থী। গত রবিবার (১৬ নভেম্বর) প্রকাশিত পুনর্নিরীক্ষণের এ ফলাফল পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন ব্যবস্থার ওপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

প্রতি বছরই পুনর্নিরীক্ষণে ফেল থেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ২০২৪ সালেও একজন এবং ২০২৩ সালেও একজন শিক্ষার্থী ফেল থেকে সরাসরি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। চলতি বছরের এসএসসি পুনর্নিরীক্ষণেও তিন বোর্ডের ২০ জন শিক্ষার্থী ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, বর্তমানে যে পুনর্নিরীক্ষণ পদ্ধতি রয়েছে তা শুধু চারটি বিষয় যাচাই করে—নম্বর প্রদান ঠিক আছে কি না, নম্বর যোগ ঠিক আছে কি না, ওএমআর শিটে নম্বর উঠেছে কি না এবং বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। নতুন করে নম্বর দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু হলে আরো বড় ধরনের ভুল বেরিয়ে আসত বলে মনে করেন তারা।

এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে রেকর্ডসংখ্যক আবেদন পড়েছে। ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট ২ লাখ ২৬ হাজার শিক্ষার্থী ৪ লাখ ২৮ হাজার খাতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।

বোর্ডভিত্তিক পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল এক নজরে:

ঢাকা বোর্ড: আবেদন ৬৬,১৫০ জন, খাতা ১,৩৬,৫০৬টি। ফল পরিবর্তন ২,৩৩১ জনের। নতুন জিপিএ-৫: ২০১ জন, ফেল থেকে পাশ: ৩০৮ জন।

কুমিল্লা বোর্ড: আবেদন ২২,৫০৩ জন, খাতা ৪২,০৪৪টি। ফল পরিবর্তন ৫৮৭ জনের। নতুন জিপিএ-৫: ২৩ জন, ফেল থেকে পাশ: ১০৮ জন।

চট্টগ্রাম বোর্ড: আবেদন ২২,৫৯৫ জন, খাতা ৪৬,১৪৮টি। নতুন জিপিএ-৫: ৩২ জন, ফেল থেকে পাশ: ৩৯৩ জন।

রাজশাহী বোর্ড: আবেদন ২০,৯২৪ জন, খাতা ৩৬,১০২টি। নতুন জিপিএ-৫: ১৯ জন, ফেল থেকে পাশ: ৫৩ জন।

যশোর বোর্ড: আবেদন ২০,৩৯৫ জন, খাতা ৩৬,২০৫টি। নতুন জিপিএ-৫: ৭২ জন (যার মধ্যে একজন ফেল থেকে সরাসরি জিপিএ-৫, আইসিটি বিষয়ে বড় নম্বর বেড়েছে)।

দিনাজপুর বোর্ড: আবেদন ১৭,৩১৮ জন। নতুন জিপিএ-৫: ৩৪ জন, ফেল থেকে পাশ: ৮৫ জন।

ময়মনসিংহ বোর্ড: আবেদন ১৫,৫৯৮ জন। নতুন জিপিএ-৫: ১০৩ জন, ফেল থেকে পাশ: ২২৫ জন।

সিলেট বোর্ড: আবেদন ১৩,০৪৪ জন। নতুন জিপিএ-৫: ৭ জন, ফেল থেকে পাশ: ৩১ জন।

বরিশাল বোর্ড: আবেদন ৮,০১১ জন। নতুন জিপিএ-৫: ১৯ জন, ফেল থেকে পাশ: ১৯ জন।

মাদ্রাসা বোর্ড: আবেদন ৯,৭০১ জন। নতুন জিপিএ-৫: ৩৪ জন, ফেল থেকে পাশ: ৪৫ জন।

কারিগরি বোর্ড: ফল পরিবর্তন ২৪১ জনের। নতুন জিপিএ-৫: ১১ জন, ফেল থেকে পাশ: ১৫৮ জন।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, খাতা মূল্যায়নে এ ধরনের গাফিলতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত পাশাপাশি পুরো ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থাকেও ক্ষুণ্ণ করে। এজন্য পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ জোরদার, তদারকি বাড়ানো এবং প্রযুক্তিনির্ভর যাচাই-বাছাই পদ্ধতি আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শিক্ষাবিদরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন—শুধু পুনর্নিরীক্ষণ নয়, খাতা পুনর্মূল্যায়নের ব্যবস্থা চালু করতে হবে, যাতে উত্তরের মান অনুযায়ী নতুন করে নম্বর দেওয়া যায়। তবেই এ ধরনের চরম গাফিলতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।