নতুন বছরে হাতে নতুন বই, উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী

টুইট ডেস্ক : নতুন বছরের প্রথম দিনে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে আনন্দোৎসবে শুরু হয়েছে বই উৎসব। প্রাথমিক ও ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রথম দিনেই সব বই হাতে পাচ্ছে। বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা ধন্যবাদ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও।

সোমবার সকালে রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রাথমিক পর্যায়ের বই উৎসবের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। সারাদেশে এই আনন্দ আয়োজন চলবে বিকেল পর্যন্ত।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণির শতভাগ বই উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছেন তারা। উপজেলা শিক্ষা অফিস সমন্বয় করে বইগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক বিলি করছে। তবে অষ্টম-নবমের ২০-২৫ শতাংশ বই এখনো ছাপা হয়নি। সেগুলো চলতি মাসেই ছাপা শেষে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

রাজশাহী

রাজশাহীতে বই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নগরীর শহীদ মামুন মাহমুদ পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে এ বই উৎসবের উদ্বোধন করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। এতে কলেজটির অধ্যক্ষ মো. গোলাম মাওলাসহ আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন রাসিক মেয়র। বই পেয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা।

নতুন বই হাতে নিয়ে সিরাজুম মুনিরা নামে এক শিক্ষার্থী বলে, ‘বই পেলাম, ডায়েরি পেলাম। অনেক ভাল লাগছে। পড়ালেখা করবো।’ তৃতীয় শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী জানায়, ‘বই পেয়ে তার ভাল লাগছে।’ অভিভাবকরা জানিয়েছেন, নতুন বই পেয়ে পড়ালেখায় মনোযোগী হবে তাদের সন্তানরা। সুশিক্ষা নিয়ে দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে এ শিক্ষার্থীরা কাজ করবে বলেও প্রত্যাশা করছেন অভিভাবকরা।

কুমিল্লা

উৎসবমুখর পরিবেশে ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে ক্ষু‌দে শিক্ষার্থীসহ প্রাথ‌মিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী‌দের মধ্যে আন‌ন্দ বই‌ছে। সোমবার সকা‌লে কু‌মিল্লা নগ‌রীর আওয়ার লে‌ডি অব ফা‌তিমা গার্লস হাই স্কু‌লে শিক্ষার্থী‌দের হা‌তে নতুন বই তু‌লে দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিস্টার মেরী রীনা মারীয়া কাস্তা।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সর্বমোট এক কোটি ২৩ লাখ ২৩ হাজার ৬৩৩টি পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।

জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭৮৩ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে হাইস্কুল এবতেদায়ি, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাত লাখ ৯২ হাজার ৬৪৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৪টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।

প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৩ লাখ ৫২ হাজার ২৪৯টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। জেলার সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণির সাত লাখ ৭২ হাজার ১৪২ জন শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, কুমিল্লায় মাধ্যমিক পর্যায়ের সব সরকারি বেসরকারি হাই স্কুল, এবতেদায়ি স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণি হতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সাত লাখ ৯২ হাজার ৬৪৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৯ লাখ ৭১ হাজার ৩৮৪টি নতুন পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে।

যশোর

যশোরে নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উচ্ছ্বসিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে বই উৎসবের মাধ্যমে জেলার ৫০ লাখ ২০ হাজার ৭৯১ জন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হবে বিনামূল্যের নতুন পাঠ্যপুস্তক।

যশোরে এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫১ পিস বইয়ের চাহিদা ছিল। তার শতভাগ হাতে পেয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আর মাধ্যমিক পর্যায়ে ৩৬ লাখ ৮১ হাজার ২৪০ পিস বইয়ের চাহিদা ছিল। যার মধ্যে অষ্টম, নবম শ্রেণির ইংরেজি বই বাদে সব বই এসে পৌঁছেছে। বছরের প্রথম দিনের বই উৎসবের মাধ্যমে সেই বইয়ের সব শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

এদিন সকাল ৯টায় যশোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে বই উৎসবের সূচনা করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন।

ময়মনসিংহ

নগরীরর নওমহল মডেল সরকারি প্রাথমিক স্কুলে বিভাগীয় পর্যায়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেছেন বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া।

জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বেলুন উড়িয়ে স্কুলের ৫০০ শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

চার হাজার এর বেশি প্রাথমিক স্কুলে বই উৎসবে জেলার ৬ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীর হাতে ৩৫ লাখ ৮১ হাজার ৮৪০ টি নতুন বই বিতরণ করা হয়। এছাড়া প্রাক প্রাথমিকে প্রায় এক লাখ নতুন বইসহ ৪ শতাধিক মাধ্যমিক স্কুলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ করা হয়। বছরের প্রথম দিনে নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়।

সিরাজগঞ্জ

‘নতুন বই সবাই নেব লেখাপড়ায় মন দেব’ স্লোগানে নতুন বছরে প্রথম দিনে সারাদেশের মতো সিরাজগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রঙ্গনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মধ্যে দিয়ে বই উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন।

নতুন বই পেয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, বছর শুরুর দিনে নতুন বই পেয়ে ও নতুন বইয়ের গন্ধে তারা অনেকটাই আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত। এ নতুন বইয়ের মাধ্যমে তাদের লেখাপড়ায় মনোযোগ আসবে।

হবিগঞ্জে

সকােল হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন নবাগত জেলা প্রশাসক জিলুফা সুলতানা।

জেলা প্রশাসক দেশের সম্পদে কেনা পাঠ্য বইয়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সব শিক্ষার্থীর প্রতি আহবান জানান। পরে অন্য অতিথিদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বই বিতরণ করেন।

ফেনী

ফেনীতে বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা শিশু-কিশোররা। সোমবার সকাল ১০টায় ফেনী শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুলে বই বিতরণ উৎসবের প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেন।

জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, ফেনীতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিকে ২৬ লাখ ৯১ হাজার ৩৯২ টি বইয়ের চাহিদার বিপরীতে পেয়েছে ১৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭৯টি বই। যা শতকরা ৬২.৩৩ শতাংশ। তবে প্রাথমিকে জেলায় মোট চাহিদা ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৩টির মধ্যে সবগুলো বই পেয়েছে বিদ্যালয়গুলো।

খাগড়াছড়ি

পাহাড়ি জেলা খাগড়াছড়িতে এবারও বছরের প্রথমদিনে পাঠ্য বই বিতরণ শুরু হয়েছে। প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে একযোগে বই বিতরণ করা হয়।

সোমবার সকালে জেলা শহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন পাঠ্য বই তুলে দেন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী।

খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বই বিতরণ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক সহিদুজ্জামান।

এদিকে খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডারের সহধর্মিনী ফারহানা আক্তার চৌধুরী।

এবছর জেলার সরকারি ও বেসরকারি মিলে ৭০৬ প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ও ১৩০টি মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাচ্ছে। প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৪২৪ শিশুর মধ্যে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৬৭টি বই বিতরণের কথা রয়েছে।

এছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় ৮৭ হাজার ২৪০ শিক্ষার্থী পাবে নতুন বই। এদিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩৮ হাজার ২৯১ জন শিশু এবারও পাবে মাতৃভাষার বই।

মানিকগঞ্জ

নাচে গানে উৎসবমুখর পরিবেশে মানিকগঞ্জে শুরু হয়েছে বই উৎসব। সোমবার বেলা ১১ টায় মানিকগঞ্জ শহরের ৮৮ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক রেহানা আকতার।

এরপর মানিকগঞ্জ বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় বই উৎসবে শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন বই তুলে দেয়া হয়।

বর্ণিল আয়োজনে শিশুরা নেচেগেয়ে উৎসবের সূচনা করে। একই সঙ্গে জেলার সাত উপজেলার প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে নতুন বই তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

মানিকগঞ্জ জেলায় এ বছর এক হাজার পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ ৮২ হাজার ২৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাত লাখ ৮৭ হাজার ৬১টি পাঠ্যবই তুলে দেয়া হচ্ছে।

মেহেরপুর

মেহেরপুর বছরের প্রথম দিনেই শিশু-কিশোরদের হাতে পৌঁছে গেছে নতুন বই। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছেছে ৫৬ ভাগ বই। বাকি বইগুলো দ্রুত পৌছে যাবে বলে দাবি মেহেরপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মেহেরপুর বিএম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শামীম হাসান।

এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, নতুন বইয়ের কারিকুলাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

তিনি বলেন, যুগপোযোগী শিক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এটি তারই অংশ। এটি সবাইকে মনে রাখতে হবে আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়বো।

জেলায় ৪৪৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই প্রয়োজন ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৯১ টি। আর মাদ্রাসা, কারিগরি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭০টি। বই প্রয়োজন ৮ লাখ ৯৬৭ হাজার।