মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে রাস্তায় জড়িয়ে চুমু!

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে প্রকাশ্যে যৌন হেনস্থা
বিশ্ব ডেস্ক: মেক্সিকো সিটির ঐতিহাসিক কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালে যা ঘটেছে, তা পুরো লাতিন আমেরিকাজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। দেশের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ক্লাওদিয়া শেইনবাম নিজের বাসভবন থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। হাসিমুখে সমর্থকদের সঙ্গে সেলফি তুলছিলেন।
হঠাৎ পেছন থেকে এক মধ্যবয়সী পুরুষ এসে তাঁকে জড়িয়ে ধরেন, বুকে হাত দেন এবং গলায় চুমু খাওয়ার চেষ্টা করেন।
ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, পুরুষটির নাম উরিয়েল রিভেরা মার্তিনেজ (৪৮)। তিনি মাতাল অবস্থায় ছিলেন এবং আগেও একাধিক নারীকে হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শেইনবাম নিজেই তাঁর হাত সরিয়ে দেন এবং বলেন, “চিন্তা করো না”। কিন্তু সহকারীরা তৎক্ষণাৎ পুরুষটিকে সরিয়ে দেয়।
ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বুধবার সকালে প্রেসিডেন্ট নিজে মেক্সিকো সিটি প্রসিকিউটর অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। উরিয়েলকে একই দিন রাত ৯টায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে “যৌন নির্যাতন”মামলা হয়েছে। সম্ভাব্য সাজা ৬ মাস থেকে ৩ বছর জেল।
শেইনবাম বুধবার সকালের সংবাদ সম্মেলনে বলেন: “আমি অভিযোগ দায়ের করেছি কারণ এটা আমার সঙ্গে ঘটেছে, কিন্তু মেক্সিকোর প্রতিটি নারীর সঙ্গে ঘটে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যদি এমন হয়, তাহলে সাধারণ তরুণীদের কী হবে? আমি ১২ বছর বয়সে বাসে হেনস্থার শিকার হয়েছি। এবার চুপ থাকব না।”
তিনি আরও ঘোষণা করেন, যৌন হেনস্থাকে দেশজুড়ে ফৌজদারি অপরাধ করার নতুন আইন “লেই ক্লাওদিয়া” আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসে পেশ করা হবে। তিনি নিজের নিরাপত্তা বাড়াবেন না, বরং জনগণের কাছাকাছি থাকবেন।
মেক্সিকোতে নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান ভয়াবহ। ২০২৪ সালে ৮২১ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছেন। ২০২৫-এর প্রথম নয় মাসে ৫০১। জীবনে ৭০ শতাংশ নারী অন্তত একবার যৌন হেনস্থার শিকার। ৯০ শতাংশ ঘটনা রিপোর্টই হয় না।
নারী অধিকারকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত। একদল বলছেন, “প্রেসিডেন্টের অভিযোগ অন্য নারীদের সাহস দেবে”। আরেক দল বলছেন, “নিরাপত্তা না রাখা, ফেমিসাইড তদন্তে শৈথিল্য—এসবের জন্য শেইনবামও দায়ী”।
আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন—সবাই শেইনবামের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। স্পেনের জেনি হারমোসো (রুবিয়ালেস কিস কেলেঙ্কারির শিকার) বলেছেন, “আমি বুঝি ক্লাওদিয়া, আমিও একই যন্ত্রণা পেয়েছি”।
শুক্রবার মেক্সিকো সিটিতে #NiUnaMenos মহিলা মিছিল ডাকা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কংগ্রেসে হেনস্থা আইনের প্রথম পাঠ হবে। উরিয়েলের প্রথম শুনানি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে।
একটি ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—মেক্সিকোর নারীরা এখনও নিরাপদ নন, এমনকি প্রেসিডেন্ট হলেও নন।
ক্লাওদিয়া শেইনবাম পার্দো মেক্সিকোর প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিনি ১৯৬২ সালের ১৯ জুন মেক্সিকো সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তাঁর বয়স ৬৩ বছর।
তাঁর বাবা কার্লোস শেইনবাম ছিলেন বুলগেরিয়ান-ইহুদি বংশোদ্ভূত রসায়নবিদ এবং মা অ্যানি পার্দো মেক্সিকান-ইহুদি জীববিজ্ঞানী। শেইনবাম ইহুদি বংশোদ্ভূত হলেও ধর্ম পালন করেন না এবং নিজেকে অজ্ঞেয়বাদী বলে পরিচয় দেন।
তিনি ১৯৮৭ সালে হেসুস মারিয়া তারুদোর সঙ্গে বিয়ে করেন এবং ২০১৬ সালে বিচ্ছেদ হয়। তাঁদের দুই সন্তান—রদ্রিগো (৩৭) এবং মারিয়ানা (৩৫)।
শিক্ষাজীবন শুরু হয় মেক্সিকোর জাতীয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে (UNAM)। ১৯৮৯ সালে ফিজিক্সে স্নাতক, ১৯৯৪ সালে এনার্জি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স এবং ১৯৯৫ সালে পরিবেশ প্রকৌশলে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
ক্যালিফর্নিয়ার লরেন্স বার্কলে ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে ১৯৯১-৯৪ সাল পর্যন্ত গবেষণা করেন। ২০০৭ সালে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারে অংশীদার হন (IPCC প্যানেলের সদস্য হিসেবে)।
রাজনৈতিক জীবন শুরু ২০০০ সালে। মেক্সিকো সিটির পরিবেশ সচিব (২০০০-০৬), তেপেজি মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র (২০১৫-১৭) এবং মেক্সিকো সিটির প্রধান (২০১৮-২৩) ছিলেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ৫৯.৭% ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
প্রধান নীতি: জলবায়ু সুরক্ষা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, নারী অধিকার, দারিদ্র্য হ্রাস। মেক্সিকোর প্রথম ইহুদি বংশোদ্ভূত প্রেসিডেন্টও তিনি।
একটি ঘটনা আবারও প্রমাণ করল—মেক্সিকোর নারীরা এখনও নিরাপদ নন, এমনকি প্রেসিডেন্ট হলেও নন।






