রাবিতে হিজাব নিয়ে অধ্যাপকের বিতর্কিত পোস্ট, বিক্ষোভে উত্তাল ক্যাম্পাস

রাবিতে হিজাব নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট: অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, বহিষ্কারের দাবি।
মুরাদুল ইসলাম সনেট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু) নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হিজাব পরিধান করে ছবি তোলা নিয়ে এক অধ্যাপকের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ক্যাম্পাসে উত্তালতা সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার্থীরা এটিকে ‘পর্দার অবমাননা’ হিসেবে অভিহিত করে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছে এবং অধ্যাপককে অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
ঘটনাটি সোমবার (২৭ অক্টোবর) দিবারাত্রে ঘটে, এবং মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত ক্যাম্পাসে উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে।
পোস্টের বিষয়বস্তু: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন রাকসু হল সংসদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের হিজাব (বোরখা) পরিধান করে শপথগ্রহণের ছবি পোস্ট করেন।
পোস্টে তিনি লিখেছেন: “এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!” এই পোস্টটি কয়েক মিনিট পর ডিলিট করা হয়, কিন্তু স্ক্রিনশটগুলো বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের শুরু
রাত ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিভাগের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা স্লোগান দিয়ে অধ্যাপকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং পর্দার অবমাননার অভিযোগ তোলে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, এই পোস্ট নারী শিক্ষার্থীদের অস্তিত্ব এবং মুসলিম নারীদের ধর্মীয় অধিকারের উপর আঘাত হানছে।
দাবি: অধ্যাপককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিভাগের সামনে অবস্থানমূলক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শিক্ষার্থী নেতাদের বক্তব্য
রাকসুর মহিলা সম্পাদক সায়েদা হাফসা বলেন, “হিজাব পড়েও নারীরা যখন অপ্রতিরোধ্য, তখন একটা পক্ষ তাদের বাধা দিয়ে, কটুক্তি করে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। টু-কোয়াটার আর মদের বোতল কী সামাজিক মূল্যায়ন করে? একইভাবে বোরখাকে নিয়ে কি সামাজিকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়? তিনি যা করতে চেয়েছেন, এখন তা করে দেখাক। এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের জন্য তাকে বহিষ্কার করতে হবে।”
রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, “যদি তার মেরুদণ্ড সোজা থাকে, তাহলে তিনি বিভাগে মদের বোতল ও হাফ পেন্ট পড়ে আসবেন। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শোকজ করবে। এখানে (ছবিতে) কোনো রাজনৈতিক দলের বোনেরা ছিলো না, শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত বোনেরা ছিলো। তাই শিক্ষার্থীদের অস্তিত্বে আঘাত লেগেছে, হিজাবের অস্তিত্বে আঘাত লেগেছে, মুসলমানের অস্তিত্বে আঘাত লেগেছে।”
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি আসেনি। তবে, অতীতের অনুরূপ ঘটনায় (যেমন ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ হিজাব নিয়ে মৌন মিছিল) প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এবারও একইভাবে তদন্তের সম্ভাবনা রয়েছে। ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীবকের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি, কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের অপেক্ষায় রয়েছে।
পূর্বের ঘটনা
রাবিতে হিজাব নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ নারী শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় হিজাব-নিকাবের দাবিতে মৌন মিছিল করেছে। উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব তখন বলেছিলেন, “এটা সেনসিটিভ বিষয়, আমরা বসব।” এবারের ঘটনা সেই বিতর্ককে নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে।
সামাজিক প্রভাব
এই পোস্ট নারী অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং ক্যাম্পাসে লিঙ্গ-সংবেদনশীলতার প্রশ্ন তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় #রাবি_হিজাব_বিতর্ক হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা সলিডারিটি দেখাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার অবস্থানমূলক কর্মসূচি করবে। যদি প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে। অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য এখনও আসেনি।






