রাবিতে শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু: তদন্ত জোরদার, সুইমিংপুলে তালা

শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে রাবিতে উত্তেজনা: তদন্ত কমিটি গঠন, সুইমিংপুল বন্ধ।
মুরাদুল ইসলাম সনেট: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের সুইমিংপুলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং সুইমিংপুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে নামেন সায়মা হোসাইন। মন্নুজান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা। সাঁতার কাটার সময় তিনি পানিতে ডুবে যান। তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন।
উপাচার্যের বক্তব্য
রাত পৌনে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে মাইকে বলেন, “তোমরা যখন এখানে সমবেত হও, তখন আমরা ঘটনার সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের এবং মেডিকেল কর্মকর্তাদের ভাষ্য জানার চেষ্টা করেছি।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবেন। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” উপাচার্যের এই আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
তদন্ত কমিটি গঠন
সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করেছে। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে তিনজন শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে এই কমিটি গঠিত হয়। রাত সাড়ে ১১টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিটিকে সুইমিংপুলে ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে সায়মার চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যালোচনা করে দায়-দায়িত্ব নির্ধারণসহ প্রাসঙ্গিক সুপারিশ প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটিকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল বন্ধ থাকবে।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
সায়মার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, সুইমিংপুলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদারকির অভাব ছিল, যা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা প্রদানে ঘাটতি ছিল বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন।
শোক ও প্রতিক্রিয়া
সায়মা হোসাইনের মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার সহপাঠী ও শিক্ষকরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, “সায়মা ছিল একজন মেধাবী ও প্রাণবন্ত শিক্ষার্থী। তার এই অকাল মৃত্যু আমাদের সবাইকে মর্মাহত করেছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ঘটনার দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সায়মা হোসাইনের মৃত্যু শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই নয়, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এবং প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ এই ঘটনার বিষয়ে সুরাহা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।






