রাজশাহীতে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়: ঐক্যের আহ্বান, সংঘাতের শঙ্কা

রাজশাহীতে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উত্তাপ, বিভাজন ও প্রত্যাশা।

রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী—একসময় বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই উত্তরাঞ্চলীয় জেলাটি আবারও আলোচনায় এসেছে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে। দলের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে ২০০১ সালে যেভাবে রাজশাহীতে জোয়ার এসেছিল, পরবর্তী দুই নির্বাচনে সেটি অনেকটাই ভাটা পড়ে।

কিন্তু ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সম্ভাব্য ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে বিএনপি আবারও মাঠে সক্রিয়, শুরু হয়েছে মনোনয়নযুদ্ধ।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনে (রাজশাহী-১ থেকে রাজশাহী-৬) বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ভিড় ক্রমশ বাড়ছে। প্রতি আসনে ৬ থেকে ১২ জন পর্যন্ত সম্ভাব্য প্রার্থী সক্রিয়ভাবে প্রচারণায় নেমেছেন। এতে তৃণমূলে বিভক্তি ও সংঘাতের ঝুঁকিও বাড়ছে।

আসনভিত্তিক মনোনয়নপ্রত্যাশী

রাজশাহী জেলার আসনভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়—

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর): মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন, শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক ও ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনসহ সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

রাজশাহী-২ (মহানগর): সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু দুইজনই আলোচনায় আছেন।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর): সাবেক প্রার্থী শফিকুল হক মিলন ও তোফাজ্জাল হোসেন তপু শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা): সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী—১১ জনের বেশি। সাবেক এমপি অধ্যাপক আব্দুল গফুর, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জহুরুল আলম বাবু, ব্যারিস্টার সালেকুজ্জামান সাগরসহ বহু প্রভাবশালী প্রার্থী মাঠে।

রাজশাহী-৫ (দুর্গাপুর-পুঠিয়া): সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলকার নাঈম, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল ও ব্যারিস্টার রেজাউল করিম রয়েছেন দৌড়ে।

রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা): বর্তমান জেলা আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, কেন্দ্রীয় সদস্য দেবাশীষ রায় মধু ও প্রবাসী প্রার্থী আরিফুল ইসলাম বিলাতসহ আটজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েন ও নেতৃত্বের সতর্কতা

রাজশাহী-১ ও রাজশাহী-৫ আসনে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এতে দলীয় ঐক্য হুমকির মুখে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন,

“দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, বিভাজন হলে ক্ষতি শুধু দলের।”

সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু যোগ করেন,

 “রাজশাহী বিএনপির শক্তি তৃণমূলেই। যে প্রার্থী সবচেয়ে যোগ্য, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।”

কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়া ও পরবর্তী ধাপ

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে স্ট্যান্ডিং কমিটি সদস্য নজরুল ইসলাম খান রাজশাহী বিভাগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।

২০২৫ সালের অক্টোবরে বিএনপি সারাদেশে প্রায় ২০০ আসনের প্রাথমিক তালিকা তৈরি করলেও রাজশাহীর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ঘোষণা এখনো হয়নি।

দলীয় কৌশল অনুযায়ী, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আসন সমন্বয়ের আলোচনাও চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির জন্য রাজশাহী এখন “পুনর্দখলের লড়াই।”

২০০৮ ও ২০১৮ সালের পরাজয়ের ক্ষত কাটিয়ে উঠতে হলে এখানকার সাংগঠনিক ঐক্য জরুরি।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ড. মিজানুর রহমান বলেন,

“রাজশাহীতে প্রার্থী বেশি মানে উৎসাহ আছে, তবে বিভাজনও আছে। ঐক্য ছাড়া সাফল্য পাওয়া কঠিন।”

রাজশাহী বিএনপির মাঠ এখন সরগরম—পোস্টার, ব্যানার, বৈঠক ও ব্যক্তিগত প্রচারণায় সরব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তবে শেষ পর্যন্ত কে পাবেন দলের ‘ধানের শীষ’, সেটাই এখন দেখার বিষয়।