বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তার পর্ন তারকা যুগল: আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ফাঁস

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা।

অসীম রায় (অশ্বিনী): বান্দরবান থেকে গ্রেপ্তারকৃত আলোচিত পর্ন তারকা যুগলকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, বাংলাদেশে বসে আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি সাইটের সঙ্গে যুক্ত থেকে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি, সম্পাদনা ও প্রচারের অভিযোগে মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তার স্ত্রী বৃষ্টি (২৮) গ্রেপ্তার হয়েছেন।

আজিম চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বরুমছড়া এলাকার, আর বৃষ্টি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার বাসিন্দা।

সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের যৌথ অভিযানে গত ১৯ অক্টোবর রাত সাড়ে তিনটার দিকে বান্দরবান পৌরসভার রোয়াংছড়ি বাস স্টেশনের একটি বহুতল ভবনের পঞ্চম তলা থেকে তাদের আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, সিম কার্ড, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ট্রাইপড এবং ভিডিও তৈরিতে ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।

সিআইডির তদন্তে জানা গেছে, যুগলটি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসে অশ্লীল ভিডিও ধারণ ও আপলোড করে বিপুল অর্থ উপার্জন করছিল। তারা বিদেশি পর্ন সাইটগুলোতে নিয়মিত কনটেন্ট প্রকাশ করতেন এবং গত এক বছরে ১১২টি ভিডিও প্রকাশের মাধ্যমে ২ কোটি ৬৭ লাখেরও বেশি ভিউ অর্জন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আজিম নিজেকে ‘মডেল’ এবং বৃষ্টি ‘বাংলাদেশের এক নম্বর মডেল’ হিসেবে পরিচয় দিতেন।

এই ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। ‘দ্য ডিসেন্ট’ পোর্টালে ১৭ অক্টোবর প্রকাশিত প্রতিবেদন সিআইডির নজর পড়ে । প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুগলটি পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে আন্তর্জাতিক পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেছে এবং নতুন পারফর্মারদের আকৃষ্ট করছিল। তারা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ফল ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছিল।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসিম উদ্দিন খান জানান, যুগলটি শুধু নিজে অপরাধ করেনি, অন্য বাংলাদেশিদেরও একই পথে প্ররোচিত করত। নেটওয়ার্কে নতুন পারফর্মার যোগ হলে কমিশন দেওয়া হতো। এই কৌশলে দেশে একটি গোপন পর্নোগ্রাফি নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে, যা সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

আইনি দিক থেকে, যুগলের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর ধারা ১০(১) ও ১১(১) অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার শাস্তি ৫–১০ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা। এছাড়া আইসিটি আইন অনুযায়ী আরও অভিযোগ যুক্ত হচ্ছে। সিআইডি জানিয়েছে, তদন্ত চলমান রয়েছে এবং নেটওয়ার্কের অন্য সদস্যদের খুঁজে বের করা হবে।

বান্দরবান সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, টেলিগ্রাম ও ম্যাসেজিং গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত অশ্লীল কার্যকলাপের অভিযোগের ভিত্তিতে যুগলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাতেই তাদের চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।

এই ঘটনা তরুণ প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, কারণ অনলাইন পর্নোগ্রাফির প্রসার সামাজিক মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ করছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অপরাধ উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সিআইডি আরও অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে, যাতে অনলাইন পর্নোগ্রাফির বিস্তার রোধ করা যায় এবং বাংলাদেশের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা করা যায়।