রাজশাহীর পদ্মায় ‘বিলুপ্ত’ কুমির!

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পদ্মা নদীর চরে পাখির ছবি তুলতে বেরিয়েছিলেন পাখিপ্রেমী দম্পতি ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা। কিন্তু পাখির বদলে তাঁরা যা দেখলেন, তা রীতিমতো বিস্ময়কর-একটি জীবন্ত মিঠাপানির কুমির। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা আইইউসিএন বাংলাদেশ ২০১৫ সালে এই প্রজাতিটিকে দেশে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল।

ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীর ষাটবিঘা চরে। স্থানীয় এক যুবক প্রথম কুমিরটি দেখতে পান, পরে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে বন বিভাগ ও প্রকৃতি গবেষকদের মধ্যে।

প্রথম দেখা মেলে গরু চরাতে যাওয়া রাজুর

সেদিন দুপুরে ষাটবিঘা চরের রাজু আহাম্মেদ গরু চরাতে গিয়ে প্রথম কুমিরটি দেখতে পান। রাজু বলেন, “পানি থেকে তিন–চার হাত দূরে কুমিরটা চরে উঠে এসেছিল। আমি তখন গান শুনছিলাম। গান বন্ধ করে ছবি তুলতে গেলেই কুমিরটা পানিতে নেমে যায়।” পরে তিনি বন বিভাগের কর্মী সোহেল রানাকে খবর দেন।

পাখির খোঁজে গিয়ে কুমিরের সন্ধান

বন বিভাগ থেকে ফোন পেয়ে নগরের কাজীহাটা এলাকার আলোকচিত্রী দম্পতি ইমরুল কায়েস ও উম্মে খাদিজা ইভা ঘটনাস্থলে যান। মূলত তাঁরা পদ্মার চরে পাখির ছবি তুলতে বের হয়েছিলেন। বিশেষ করে লাল মুনিয়ার ছবি তুলতে। কিন্তু ভাগ্যের লিখন যেন অন্য কিছু ছিল।

খাদিজা বলেন, “রোদের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। ঘাটের দোকানে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম, তখনই বন বিভাগের ফোনটা এলো। মুহূর্তেই ঘুম কেটে গেল।”

ড্রোনে ধরা পড়ে কুমির

রাজশাহীর ভারতের সীমান্তঘেঁষা চর এলাকায় গিয়ে তাঁরা প্রথমে কিছুই দেখতে পাননি। হতাশ হয়ে বসে পড়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর ইমরুল কায়েস ড্রোন উড়িয়ে খোঁজ শুরু করেন। হঠাৎই স্ক্রিনে দেখা যায় পানিতে বিশাল এক কুমিরের চলাফেরা।

“কায়েস হঠাৎ চিৎকার করে উঠল-‘পাগলি, কুমির!’ আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি সত্যিই জীবন্ত কুমির। জীবনে প্রথমবার প্রকৃতিতে সামনাসামনি কুমির দেখলাম,” বলেন উম্মে খাদিজা।

তাঁরা কুমিরটির ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন, যা পরবর্তীতে বন বিভাগে পাঠানো হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

আইইউসিএন বাংলাদেশের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম (সীমান্ত দীপু) জানান, “২০১৫ সালে বাংলাদেশে মিঠাপানির কুমিরকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে এর আগে পাবনায় ও অন্য দুটি স্থানে দেখা গিয়েছিল। সেগুলোকে বর্তমানে সুন্দরবনের করমজল সেন্টারে রাখা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “রাজশাহীতে পাওয়া কুমিরটি সম্ভবত ভারতের চাম্বুল নদী থেকে এসেছে। এটি স্থানীয়ভাবে জন্ম নেওয়া কুমির হওয়ার সম্ভাবনা কম।”

তিন প্রজাতির কুমির বাংলাদেশে

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে তিন ধরনের কুমির রয়েছে-

১. লোনাপানির কুমির, যা সুন্দরবনে দেখা যায়।

২. মিঠাপানির কুমির, যা দেশে বিলুপ্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. ঘড়িয়াল, যা পদ্মা-যমুনা নদীতে বিচরণ করে।

স্থানীয়দের কৌতূহল ও সংরক্ষণ উদ্বেগ

স্থানীয়রা জানান, এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেননি তাঁরা। বন বিভাগও ঘটনাস্থল পরিদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকৃতি সংরক্ষণকর্মীরা বলছেন, রাজশাহীর পদ্মায় কুমিরের উপস্থিতি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের জন্য এক বিরল ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।