পাহাড়ি নদীতে ভাসছে জাম্বুরার সোনালি স্রোত
বান্দরবানে প্রাকৃতিক পরিবহণে কৃষকদের নতুন সাফল্য
বান্দরবান প্রতিনিধি: বাংলাদেশের পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে এখন নদীর স্রোতে ভাসছে শত শত জাম্বুরা। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে এই ফলগুলো পৌঁছে যাচ্ছে নিচু সমতলে—একটি অভিনব ও প্রাকৃতিক পরিবহণ ব্যবস্থায়।
স্থানীয় কৃষকরা পাহাড়ি বাগান থেকে জাম্বুরা সংগ্রহ করে নদী ও ছড়ায় ভাসিয়ে দেন। স্রোতের টানে ফলগুলো নিচের ঘাটে এসে জালের বাঁধে আটকে যায়, সেখান থেকে সংগ্রহ করে সড়কপথে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম, ঢাকা ও দেশের অন্যান্য শহরে।
কৃষক অসিত বরন চাকমা বলেন, “কাঁচা পাহাড়ি পথে জাম্বুরা নামাতে অনেক খরচ হয়। কিন্তু নদীর স্রোত ব্যবহার করায় খরচ অর্ধেকেরও কম পড়ে।”
আরেক চাষি লিমা তংচঙ্যা জানান, “এই প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ফল ভাসিয়ে আনার ফলে ক্ষতি কমে, বাছাই সহজ হয়, আর লাভও বেড়েছে।”
প্রতিদিন শত শত জাম্বুরা এভাবে ভেসে আসে নদীর ঘাটে। ছোট ফলের দাম ১০ টাকা, আর বড় জাম্বুরার দাম ৩০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, দাম কম এবং গুণমান ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন শহরে বান্দরবানের জাম্বুরার চাহিদা বেড়েছে।
প্রাকৃতিক সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
এই পদ্ধতি শুধু ব্যয় সাশ্রয়ী নয়, বরং ফলের গুণমানও অক্ষুণ্ণ রাখে। পাহাড়ি মাটি ও আবহাওয়া জাম্বুরা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, এবং কৃষকরা কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ব্যবহার করেন না।
তবে চ্যালেঞ্জও আছে—বর্ষায় স্রোতের অতিরিক্ত গতি ও শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব পরিবহণে সমস্যা তৈরি করে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
বান্দরবানের পাহাড়ি অর্থনীতিতে জাম্বুরা এখন একটি মূল চালিকা শক্তি। নদীর প্রাকৃতিক স্রোত ব্যবহার করে পরিবহণ খরচ কমানোয় কৃষকদের আয় বেড়েছে, জীবনযাত্রা উন্নত হয়েছে। পর্যটকদের কাছেও এই দৃশ্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে—প্রকৃতি ও মানববুদ্ধির মেলবন্ধনের এক অনন্য নিদর্শন হিসেবে।
বান্দরবানের কৃষকরা যে প্রাকৃতিক পরিবহণ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, তা শুধু টেকসই নয়—পরিবেশবান্ধবও। সরকারি সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেলে এই উদ্যোগ পাহাড়ি অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।