পার্বত্যে আনসারের নিরাপত্তা অঙ্গীকার

পার্বত্য অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা ও টেকসই পরিবেশ রক্ষায় আনসার ও ভিডিপির অবিচল অঙ্গীকার।

বান্দরবান থে‌কে অসীম রায় (অশ্বিনী): বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (আনসার ও ভিডিপি) পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণে দৃঢ় পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছে। বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বুধবার দিনব্যাপী বান্দরবান ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন আনসার ব্যাটালিয়ন পরিদর্শন করেন।

এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল বাহিনীর কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন, সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি, এবং টেকসই শান্তি ও পরিবেশ রক্ষায় তাদের অঙ্গীকার পুনর্নবীকরণ।

সুয়ালক আনসার ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

সফরের প্রথম গন্তব্য ছিল বান্দরবানের সুয়ালক আনসার ব্যাটালিয়ন (১০ বিএন)। ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মহাপরিচালক বলেন, “স্বাধীনতার আগে ও পরে আনসার বাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই বাহিনী দেশের স্বার্থে নিবেদিত থেকে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।”

সভায় উপস্থিত সদস্যরা মহাপরিচালকের বক্তব্যে অনুপ্রাণিত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ, সবুজ বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সুয়ালক আনসার ব্যাটালিয়ন গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করে। মহাপরিচালক নিজ হাতে বান্দরবানের সুয়ালক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করেন।

তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আনসার সদস্যদের ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। আমাদের লক্ষ্য শুধু আইনশৃঙ্খলা নয়, একটি সবুজ ও নিরাপদ বাংলাদেশ গড়া।”

এই উদ্যোগ পার্বত্য অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নতুন অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে মহাপরিচালক বান্দরবানের রুমা আনসার ব্যাটালিয়ন (১৬ এবিএন) পরিদর্শন করেন। তিনি সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আনসার বাহিনী এখন একটি নির্ভরযোগ্য শক্তি। প্রত্যেক সদস্যকে পেশাদারিত্ব, সততা ও আত্মনিবেদন দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকি, সামাজিক স্থিতিশীলতা বা সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম—সবক্ষেত্রেই আনসার বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। আমাদের বাহিনী হবে আরও দক্ষ, আধুনিক ও মানবিক।”

সফরের শেষাংশে মহাপরিচালক চট্টগ্রামের পটিয়া আনসার ব্যাটালিয়ন (৩৭ বিএন)-এর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে বলেন, “দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অর্জনই আনসার সদস্যদের প্রকৃত শক্তি। সুশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত বাহিনীই জাতির নিরাপত্তার গ্যারান্টি।”
তিনি সদস্যদের পেশাগত উৎকর্ষে আরও মনোযোগী হতে উৎসাহিত করেন এবং প্রশিক্ষণের মানোন্নয়নের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের নিরাপত্তা বলয়কে আরও মজবুত করার নির্দেশ দেন।

মহাপরিচালকের সফরে সঙ্গে ছিলেন উপমহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোঃ সাইফুল্লাহ রাসেল, উপমহাপরিচালক (চট্টগ্রাম রেঞ্জ) ড. সাইফুর রহমানসহ বাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। তাদের উপস্থিতিতে সফরটি হয়ে ওঠে আরও কার্যকর ও অনুপ্রেরণামূলক।

দিনব্যাপী এই সফরের মাধ্যমে আনসার ও ভিডিপি বাহিনী পুনরায় প্রমাণ করেছে যে, তারা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বাহিনী নয়, বরং পরিবেশ, উন্নয়ন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার এক অবিচল রক্ষক।

পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও টেকসই উন্নয়নে তাদের এই অঙ্গীকার ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তা কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে।