মাদাগাস্কারে সেনা অভ্যুত্থান, সংবিধান স্থগিত
মাদাগাস্কারে সামরিক অভ্যুত্থান: রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে সংসদের অভিযোগপত্র, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের ঘোষণা।
বিশ্ব ডেস্ক: মাদাগাস্কারে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আজ নাটকীয় মোড় নেয়, যখন জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ রাষ্ট্রপতি আন্দ্রি রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে ‘কর্তব্যত্যাগের’ অভিযোগপত্র জারি করে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই অভিজাত সামরিক ইউনিট CAPSAT ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয়, সংবিধান স্থগিত করে একটি সামরিক প্রশাসনিক কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়।
বিক্ষোভ থেকে অভ্যুত্থান
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুবকদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রপতি বিরোধী বিক্ষোভ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানপথে ক্ষমতায় আসা রাজোয়েলিনার বিরুদ্ধে জনঅসন্তোষ চরমে পৌঁছায়। সোমবার তিনি হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় দেশ ত্যাগ করেন বলে দাবি করেন এবং ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি নিরাপদ স্থানে আছেন। এরপর সংসদ ভেঙে দেওয়ার ফরমান জারি করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
সংসদের ভোট ও সামরিক ঘোষণা
রাষ্ট্রপতির ফরমান অগ্রাহ্য করে মঙ্গলবার সকালে সংসদ জরুরি অধিবেশনে বসে এবং ‘কর্তব্যত্যাগ’ অভিযোগে ভোট গ্রহণ করে। বিরোধী ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা মিলে অভিযোগপত্র অনুমোদন করেন। রাষ্ট্রপতি দপ্তর একে “আইনবহির্ভূত ও অসাংবিধানিক” বলে অভিহিত করে।
এর পরপরই কর্নেল মাইকেল রান্দ্রিয়ানিরিনা ঘোষণা দেন—“আমরা ক্ষমতা দখল করেছি, দেশ পরিচালনার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।” তিনি জানান, সেনাবাহিনী, জেন্ডারমারি ও পুলিশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিটি সাময়িকভাবে প্রশাসন পরিচালনা করবে।
জনতার প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক উদ্বেগ
অ্যান্টানানারিভোর রাস্তায় হাজারো মানুষ সেনাবাহিনীর পক্ষে উল্লাস প্রকাশ করে। বিরোধী দল এই ঘটনাকে ‘জনগণের বিজয়’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকান ইউনিয়ন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শান্তিপূর্ণ সমাধান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সম্ভাব্য পরিণতি
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, যদি সামরিক প্রশাসন দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশ আরও গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে পড়বে।
বর্তমানে রাষ্ট্রপতি রাজোয়েলিনার অবস্থান অনিশ্চিত, এবং তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সূত্র: এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, স্থানীয় সংবাদ