ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলার বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা
- “রোমে ইউনূস-লুলা বৈঠক: সামাজিক ব্যবসা থেকে জলবায়ু পর্যন্ত বিস্তৃত আলোচনা।”
- “ফুটবলের ভালোবাসায় এক হলো বাংলাদেশ ও ব্রাজিল।”
টুইট প্রতিবেদক: ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সোমবার রোমে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম (WFF) অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই আগ্রহ জানান।
দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে সহযোগিতা ও নতুন অধ্যায়
FAO সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে দুই নেতা সামাজিক ব্যবসা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং দারিদ্র্য মোকাবিলার কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের ওপর আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট লুলাকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। লুলা আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বলেন,
“আমি বাংলাদেশে যাব—এটি হবে এক চমৎকার সুযোগ।”
তিনি জানান, ব্রাজিল বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণ অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে চায়, একই সঙ্গে নিজ দেশের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে আগ্রহী।
ফেব্রুয়ারিতে সফরের সম্ভাবনা
প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, তিনি আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশ সফরে আসার পরিকল্পনা করছেন।
অন্যদিকে, প্রফেসর ইউনূস জানান, ওই সময় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা “১৬ বছর পর প্রথম সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন।”
তিনি বলেন, “গত শাসনামলে নির্বাচন ছিল ভুয়া ও প্রহসনমূলক; এবার হবে একটি প্রকৃত নির্বাচন।”
বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয়
দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে—
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার প্রযুক্তি বিনিময়, ওষুধ ও ভ্যাকসিন উৎপাদন—বিশেষ করে পেটেন্টমুক্ত টিকা উদ্ভাবনে যৌথ উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও আসন্ন COP30 সম্মেলনের প্রস্তুতি, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে যুব নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে মতবিনিময়।
প্রফেসর ইউনূস স্মরণ করেন, ২০০৮ সালে লুলার সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ব্রাজিল সফরের অভিজ্ঞতা।
COP30-এ অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ
প্রেসিডেন্ট লুলা প্রফেসর ইউনূসকে COP30 সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান, যা ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্দেশ্য হবে বিশ্বের বৃহত্তম ক্রান্তীয় অরণ্য রক্ষায় বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করা।
তবে ইউনূস জানান, নির্বাচনী প্রস্তুতির কারণে তিনি সম্ভবত COP30-এ অংশ নিতে পারবেন না।
বন্ধুত্ব, ফুটবল ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা
বৈঠকের এক পর্যায়ে দুই নেতা ফুটবলকে “বিশ্বের ঐক্যের প্রতীক” হিসেবে উল্লেখ করেন। প্রফেসর ইউনূস হাসতে হাসতে বলেন,
“বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ব্রাজিলের ফুটবল দলকে সমর্থন করে মানুষ।”
এই উষ্ণ মুহূর্তে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফারিদা আখতার, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ, এবং পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
ব্রাজিলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট লুলার এই সম্ভাব্য সফর বাংলাদেশ-ব্রাজিল সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। দুই দেশ কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, সামাজিক ব্যবসা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।