গাজা যুদ্ধের অবসান: বন্দী বিনিময়ে বাবা-পুত্রের অশ্রুসিক্ত পুনর্মিলন

বন্দী বিনিময়ে মানবতার জয় — ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই বছরের রক্তক্ষয়ী গাজা যুদ্ধের অবসান, আবেগে ভেসেছে খান ইউনিসের রাস্তাঘাট।

টুইট প্রতি‌বেদক: দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটেছে একটি ঐতিহাসিক বন্দী বিনিময় ও শান্তি চুক্তির মাধ্যমে—যা সম্পন্ন হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায়। এই চুক্তির অধীনে হামাস ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে, বিনিময়ে ইসরায়েল প্রায় ২,০০০ প্যালেস্টাইনি বন্দীকে মুক্তি প্রদান করেছে।

এই বিনিময়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব দেখেছে এক হৃদয়স্পর্শী মানবিক দৃশ্য—ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বছরের পর বছর পর এক প্যালেস্টাইনি ছেলের তার বাবার বুকে ফেরা। খান ইউনিসের ভিড়াক্রান্ত রাস্তায় যখন ওই বাবা-পুত্র আলিঙ্গনে কাঁদছিলেন, তখন উপস্থিত জনতা এবং সামাজিক মাধ্যম একসাথে আবেগে ভেসে যায়। একজন ব্যবহারকারী X (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “তিনি হাসলেন—আমরা সবাই কেঁদে ফেললাম। এটি মানবতার প্রকৃত ছবি।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর শুরু হওয়া এই যুদ্ধ দুই বছর ধরে চলেছে। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬৭,৮০০ এবং আহত ১,৭০,০০০-এর বেশি। ইসরায়েলের পক্ষেও নিহত হয়েছে ১,২০০ জনের বেশি।

ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে হামাস ২০ জন ইসরায়েলি নারী, শিশু ও প্রবীণ বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েল মুক্ত করেছে ২৫০ জন আজীবন সাজাপ্রাপ্ত ও ১,৭০০ জন যুদ্ধকালীন গ্রেপ্তার হওয়া প্যালেস্টাইনিকে। একইসঙ্গে গাজার কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে এবং মানবিক সহায়তা বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে।

খান ইউনিস ও রামাল্লায় বন্দী মুক্তদের স্বাগত জানাতে মানুষের ঢল নামে। পতাকা, উল্লাস, কান্না ও প্রার্থনায় ভরে ওঠে চারদিক। অনেক বন্দী দীর্ঘ কারাবাসে দুর্বল হলেও পরিবারের কোলে ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবন। নাসির হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এই চুক্তিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আখ্যা দিয়েছেন “ঐতিহাসিক ভোর” হিসেবে। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় সম্পন্ন এই চুক্তিতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি কেবল প্রথম ধাপ—গাজার পুনর্গঠন ও হামাসের ভবিষ্যত ভূমিকা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

তবুও বাবা-পুত্রের মতো এই পুনর্মিলনগুলো মনে করিয়ে দিচ্ছে: যুদ্ধের অন্ধকারেও মানবতার আলো জ্বলে।