সীমান্তে স্ফটিক উদ্ধার অভিযান: থাই সেনানায়কের সরেজমিন পরিদর্শন

থাই সীমান্তে স্ফটিক উদ্ধার অভিযান: ১ম সেনানায়কের সরেজমিন পরিদর্শন, নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থায় নতুন গতি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  থাইল্যান্ডের সাকাও প্রদেশের থাই–কম্বোডিয়ান সীমান্তবর্তী নং য়া কাও গ্রামে চলমান স্ফটিক (মাইন) উদ্ধার অভিযানের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে আজ মাঠে নামেন থাইল্যান্ডের ১ম সেনানায়ক অঞ্চলের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওরায়ুত লুয়াং সুয়ান।

এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল সীমান্তের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জনগণের জন্য ঝুঁকিমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা।

অভিযান পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নির্দেশনা

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওরায়ুত, যিনি ১ম সেনানায়ক অঞ্চলের অপারেশন সেন্টারের পরিচালকও, সকাল থেকেই অপারেশনাল এলাকায় অবস্থান নেন।

তিনি স্থানীয় স্ফটিক উদ্ধার দলের সঙ্গে কথা বলেন, উদ্ধার কার্যক্রমের মানচিত্র পর্যালোচনা করেন এবং মাইন নিষ্ক্রিয়করণ প্রক্রিয়া সরাসরি তদারকি করেন।

গত চার দিনে (১০ থেকে ১৩ অক্টোবর) উদ্ধার দল দুটি নতুন স্ফটিক চিহ্নিত করে সফলভাবে নিষ্ক্রিয় করেছে। এর মধ্যে একটি এমএন৭৯ (MN79) এবং অন্যটি পিএমএন (PMN) ধরনের মাইন। এ নিয়ে মোট উদ্ধারকৃত স্ফটিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭-এ।

অভিযানটি বুরাপা আর্মি গ্রুপের (কগল. বুরাপা থপ.১) অধীনে ১২তম স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের (ইচক.১২) ২য় ক্যাভালরি ব্যাটালিয়ন (চ.পান.২) পরিচালনা করছে।

“জনগণকে নিরাপদ জীবন ফেরানোই আমাদের লক্ষ্য”

অভিযান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে কমান্ডার ওরায়ুত বলেন, “এই স্ফটিক উদ্ধার অভিযান কেবল সামরিক দায়িত্ব নয়—এটি আমাদের জনগণকে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। যতক্ষণ না পুরো এলাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়, আমরা কোনো ঝুঁকি নেব না।”

তিনি সেনাদের নির্দেশ দেন আরও সতর্কভাবে কাজ করতে এবং এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি টহল জোরদার করতে।
অভিযানটি থাইল্যান্ডের বোম্বার্ডমেন্ট অপারেশন সেন্টার ও জাতীয় স্ফটিক অপারেশন সেন্টারের (স্কোপক. থচ.) সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

যুদ্ধ প্রস্তুতি ও মনোবল বৃদ্ধি

পরিদর্শনের দ্বিতীয় অংশে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওরায়ুত সীমান্তরক্ষী ক্যাভালরি ও আর্টিলারি ইউনিটের যুদ্ধ প্রস্তুতি পরীক্ষা করেন। তিনি সৈন্যদের হাতে উপহার ও প্রণোদনা তুলে দেন, তাদের পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং বলেন,

 “আমরা শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে জয় চাই না—আমরা চাই প্রতিটি সৈন্যের মনোবল দৃঢ় থাকুক, তাদের পরিবারের নিশ্চিন্ত জীবন থাকুক।”

সীমান্ত পুলিশ ও সেনার যৌথ বৈঠক

কমান্ডার ওরায়ুত পরে জাতীয় পুলিশের কমান্ডার পুলিশ জেনারেল কিত্তিরাত পান্থপেত-এর সঙ্গে বৈঠক করেন।
তারা সীমান্ত আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা সমন্বয় নিয়ে আলোচনা করেন। যৌথভাবে উভয় বাহিনী ক্রাউড কন্ট্রোল ইউনিট ও যৌথ সামরিক টিম পরিদর্শন করে উৎসাহ দেন।
ওরায়ুত বলেন, “সরকারি সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে সার্বভৌমত্ব ও জননিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে।”

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সামরিক-জনসংযোগের সেতুবন্ধন

সফরের শেষে তিনি স্থানীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানান, বলেন, “আপনাদের আস্থা ও সহযোগিতাই আমাদের শক্তি। থাইল্যান্ডের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি রক্ষার প্রেরণা আমরা এখান থেকেই পাই।”

এই বক্তব্য সামাজিক ও গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, যা সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা আরও বাড়িয়েছে।

সীমান্তের ভবিষ্যৎ

নং য়া কাও এলাকা অতীতে সংঘর্ষ ও বিদ্রোহী কার্যকলাপে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। মাইন উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকার কেবল নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনছে না—জনগণের কৃষিজমি ও জীবিকার পুনরুদ্ধারও নিশ্চিত করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই অভিযান থাইল্যান্ডের সীমান্ত অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।