খান ইউনিসের ফিলিস্তিনিদের অদম্য সংগ্রামের এক হৃদয়বিদারক চিত্র
খান ইউনিসে সাহায্যের জন্য ছুটে আসা ফিলিস্তিনিরা: ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি।
টুইট প্রতিবেদন: সমবার ১২ অক্টোবর, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে একটি হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে। ইসরায়েলি বোমাবর্ষণের ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ফিলিস্তিনিরা নতুন আগত সাহায্যের জন্য ছুটে এসেছে। এই দৃশ্যগুলোকে ধরে নিয়েছে ফ্রান্স প্রেস এজেন্সি (AFP)-এর ফটোগ্রাফার ওমর আল-কাত্তা, যার ছবিগুলো বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকটের একটি জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি উপস্থাপন করেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ঘটনার বিবরণ, পটভূমি, মানবিক প্রভাব এবং যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করব। বর্তমান তারিখ ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ অনুসারে, এই ঘটনা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।
১২ অক্টোবর সকাল থেকে খান ইউনিসের রাস্তায় ফিলিস্তিনিরা সাহায্যের ট্রাকগুলোর চারপাশে ভিড় করে। কেরেম আবু সালেম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশকারী সাহায্যের ট্রাকগুলো থেকে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে, দীর্ঘদিনের অবরোধ এবং যুদ্ধের কারণে উদ্বেগময় পরিস্থিতিতে লোকেরা ছুটে এসে সাহায্যের প্যাকেটগুলো কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। AFP-এর ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিরা সাহায্যের পার্সেলগুলো কাঁধে নিয়ে রাস্তা দিয়ে চলছে, যখন পটভূমিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। এই দৃশ্যটি যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে রেকর্ড করা হয়েছে, যখন হাজার হাজার বাস্তুহারা ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িঘরে ফিরে যাচ্ছে। ওমর আল-কাত্তার ছবিগুলোতে দেখা যায়, লোকেরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছে এবং সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছে, যা গাজার দুর্দশার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।
এই ঘটনার সময়কালে কোনো বড় ধরনের সহিংসতা ঘটেনি, তবে পূর্ববর্তী মাসগুলোতে সাহায্য বিতরণের সময় ভিড়জমজমে বেশ কয়েকটি ঘটনায় ২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে শুরু হওয়া সাহায্য বিতরণের সময়কার হত্যাকাণ্ডে ২,৬০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতি
গাজা যুদ্ধ ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলছে, যাতে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। খান ইউনিস, গাজার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর, বারবার ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজার কিছু অংশ থেকে পিছু হটতে শুরু করে, যা যুদ্ধবিরতির সূচনা করে। এই যুদ্ধবিরতির অংশ হিসেবে হামাস ৭ জন ইসরায়েলি বন্দিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসে হস্তান্তর করে এবং আরও ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
জাতিসংঘের মতে, যুদ্ধবিরতির পর গাজায় সাহায্য প্রবেশ শুরু হয়েছে, যা আগের মাসগুলোতে মাত্র ২০% প্রয়োজন মেটাতে পেরেছে। এই যুদ্ধবিরতি ট্রাম্পের মন্তব্যের পরে আরও শক্তিশালী হয়েছে, যিনি বলেছেন যে গাজা যুদ্ধ শেষ। তবে, দীর্ঘমেয়াদী শান্তির জন্য চ্যালেঞ্জ এখনও রয়েছে।
মানবিক পরিস্থিতি
গাজায় দুর্ভিক্ষের সংকট চরমে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে অপুষ্টির কারণে শত শত শিশুসহ অসংখ্য ফিলিস্তিনি মারা গেছে। খান ইউনিসে ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের মধ্যে ফিরে আসা লোকেরা সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। AFP-এর ছবিগুলো দেখায়, শিশু এবং নারীরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছে, যা যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের প্রমাণ। জাতিসংঘের কর্মীরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির পর সাহায্যের প্রবাহ বাড়ছে, কিন্তু পুনর্নির্মাণের জন্য বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন।
ওমর আল-কাত্তার ছবিগুলো শুধু একটি দিনের ঘটনা নয়, বরং গাজার ফিলিস্তিনিদের অদম্য সংগ্রামের প্রতীক। যুদ্ধবিরতি আশার আলো জ্বালিয়েছে, কিন্তু স্থায়ী শান্তি এবং মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন অপরিসীম।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব এখন এই সংকট মোকাবিলা করা।