ভোটের আগেই নৌকার প্রার্থীর দম্ভোক্তি দেখে হতবাগ সুশিল সমাজ

টুইট ডেস্ক : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ দম্ভোক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, আমি তাহেরপুরের রাজা। আমিই এখানকার সরকার। আমার কোনো কর্মীকে গ্রেপ্তার করতে হলে আমার অনুমতি লাগবে। তার এই দাম্ভোক্তি প্রকাশ করে দেয়া বক্তব্য শুনে হতবাগ বাগমারার সুশিল সমাজ। ক্ষুদ্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের বাড়ি বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার জামগ্রামে এবং তিনি তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। এবার তিনি নৌকা প্রতীক পেয়ে প্রথমবার এমপি নির্বাচন করছেন।

জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাগমারার দক্ষিণ মাঝিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি প্রচারসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর উদ্দেশ্যে তীব্র হুমকিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন আবুল কালাম আজাদ। এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, (গালি) এবার কাঁচি পেয়েছো। এবার অর কাঁচি দিয়েই  অর (ওটা…) কেটে দেওয়া হবে। তোমার শেষ খেল দেখাব ৭ তারিখে। তোমার হাত-পা ভেঙে তোমাকে শিকদারিতে (এনামুলের নিজের গ্রাম) পাঠিয়ে দেব। ওই… বাচ্চা’ ৮ তারিখের পর বাগমারাতে আর তোমার চেহারা দেখা যাবে না।

নৌকার প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের এই বক্তব্যটি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে। তবে কালামের হুমকিমূলক বক্তব্য ভাইরাল হলেও এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলা রিটার্নিং অফিসার বা নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই হুমকিমূলক বক্তব্যের বিষয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির কাছেও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল কালাম প্রতিদ্বন্দ্বী এনামুল হককে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, ‘‘ওই…বাচ্চাকে প্রথম পাঁচ বছর আমি তাহেরপুরে মাস্তানি করতে দিয়েছি। আর তাকে মাস্তানি করতে দেওয়া হবে না। আমি এবার মনোনয়ন নিয়ে এসে খেলা দেখিয়ে দিয়েছি। নির্বাচনের দিন আরও খেলা দেখাব। শালা তুমি ঘুঘু দেখেছো তুমি ঘুঘুর ফাঁদ দেখোনাই।

‘‘আমি আবুল কালাম আজাদ বলছি- আমি এখানে যা বলব তাই হবে। ২০০৮ সালে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম, পাইনি। এবার আমি মনোনয়ন নিয়ে এসে প্রতিশোধ নিয়েছি। আমি এবার তোমাকে আর সুযোগ দিতে চাই না। আগামী ৭ তারিখে সব ফয়সালা হয়ে যাবে। আমিই জিতব। তোমার দিন শেষ। মনে রাখবি, তোমার আর বাগমারায় থাকা হবে না। তোকে বাগমারা ছাড়তে হবে।’’

কালাম আরও বলেন, ‘আমি ভালো ছেলে বলে তোমাকে ২৬ তারিখের পর বাগমারাতে ঢুকতে দিয়েছি। তুই আমার বিরুদ্ধে শুধু নালিশ আর নালিশ ও অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছিস। তুই কি জানিস- তুমি কার সঙ্গে লড়ছিস। তুমি আমাকে চেনোনা। আমি কি করতে পারি তুমি জানোনা। তুমি খেলা দেখনি। কড়াই গণ্ডায় হিসাব করে তোমাকে বাগমারাতে সব দিয়ে যেতে হবে। তোমার কোল্ড স্টোর বিক্রি করতে হবে। তোমার বউ-ছেলে বিক্রি করতে হবে। এবার তোমার পিঠের চামড়া থাকবে না।’

কালাম বলেন, ‘যেদিন তুমি নৌকা হারিয়েছো, সেই দিনই তোমাকে আর বাগমারা ঢুকতে দেওয়া হতো না। তোমার পিঠের চামড়া থাকত না। আমি ভালো ছেলে বলে তোমাকে বাগমারায় ঢুকতে দিয়েছি। আমিই নির্বাচিত হব। আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।’

এলাকাবাসী হতে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাগমারার জনগনের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর, নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন, মাইক্রোবাস ও মটরসাইকেল বাহিনীর তান্ডব, ভয়ভীতি ও অন্ত্র প্রদর্শনের ফলে সেখানে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে।

‍সূত্র জানায়, এ আসনে ভোটের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তার সমর্থকদের উপর নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজনের হুমকি ও হামলা অব্যহত রয়েছে। গত  ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৌকার সমর্থকরা কাঁচি প্রতীকের ১৬টি নির্বাচনি ক্যাম্প ২৬ বার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।  উপজেলার ৩০ টি স্থানে কাঁচির কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের ৫৫ জন নেতাকর্মী। যাদের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রাজশাহীর এ আসনে ভোটের লড়াইয়ে আছেন মোট ছয়জন। তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও টানা তিনবারের এমপি এনামুল হক (কাঁচি), তাহেরপুর পৌরসভার টানা তিনবারের মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (নৌকা), উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব (নাঙ্গল), বিএনএমের প্রার্থী সাইফুল ইসলাম রায়হান, এনপিপির জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবুল হোসেন।