বান্দরবানে বাঙালি সম্প্রদায়ের বৈষম্যবিরোধী হরতাল ১৩ অক্টোবর

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন রাস্তায়!
নিজস্ব প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি সম্প্রদায়ের দীর্ঘস্থায়ী অসন্তোষ এবার সরাসরি রাস্তায় এসেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ (পিসিএনপি) ১৩ অক্টোবর বান্দরবানে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সর্বাত্মক হরতালের ডাক দিয়েছে।
এটি তিন পার্বত্য জেলায় পর্যায়ক্রমে চলতে থাকা কর্মসূচির প্রথম ধাপ, যা অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
বৃহস্পতিবার বান্দরবানের গ্র্যান্ড প্যারাডাইজ রিসোর্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পিসিএনপির কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মো. মজিবুর রহমান এই হরতালের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “যুগ যুগ ধরে বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার। সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত আমরা। এই অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল পালন হবে—সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন।” সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দফতর সম্পাদক মো. শাহজালাল, জেলা সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম, সেক্রেটারি মো. নাছির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আবছার এবং স্থানীয় সাংবাদিকরা।
হরতালের সময়কাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। সরকারি অফিস, কলেজ ও আদালত বন্ধ থাকবে, তবে জরুরি সেবা যেমন অ্যাম্বুলেন্স, সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি এবং খাবার-ওষুধের দোকান চালু থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মিডিয়ার সংবাদ যানবাহন চলাচল অব্যাহত রাখবে। এই ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে জনজীবনের ক্ষতি কম হলেও আন্দোলনের কণ্ঠস্বর স্পষ্ট থাকবে।
পিসিএনপির আট দফা দাবি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি (১৯৯৭)-এর অপূর্ণতার প্রতিফলন। এর মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের শাসনবিধি বাতিল করে সাধারণ প্রশাসন চালু করা, রাজার সনদ বাতিল করা, ভূমি ক্রয়-বিক্রয় চালু করা, বাজার প্লট লিজ ও ব্যাংক ঋণ পুনরায় চালু করা, পরিবেশবান্ধব ইটভাটা-কারখানা চালু করা, সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন, অবৈধ অস্ত্র ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা এবং শিক্ষা-স্বাস্থ্য-চাকরিতে বৈষম্য দূর করা। এই দাবিগুলো অঞ্চলের ঐতিহাসিক বৈষম্যের প্রতিক্রিয়া।
পিসিএনপি হুমকি দিয়েছে, দাবিগুলো না মানলে খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে হরতাল বা অবরোধ হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রস্তুত, তবে অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া এখনও আসেনি। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, শান্তি চুক্তির অপূর্ণতা এখন বিস্ফোরক রূপ নিতে পারে এবং দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
পিসিএনপি এই হরতালকে ‘জাগরণের প্রথম ধাপ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে আশা ও উদ্বেগ মিশ্রিত—দাবিগুলোর ভাগ্য ও সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করছে।






